ভূপৃষ্ঠে এক পবিত্র ঘটনা, যা শুধুমাত্র একবার ১৪৪ বছর পর দেখা যায়। সেই মহামিলনের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত ধন্য মনে করছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। শুক্রবার, প্রয়াগরাজের পবিত্র ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান ও পূজা দিয়ে, তিনি প্রকাশ্যে কৃতজ্ঞতা জানান তার অনুরাগী ও সানাতন ধর্মের প্রতি।
মহা কুম্ভ মেলার পবিত্রতা ও অনুভূতি
সুন্দর ও তাত্ত্বিকভাবে প্রশংসিত অভিজ্ঞতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লিখেন, “আজ আমি প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে পূজা করতে এবং পবিত্র ‘স্নান’ করার শুভ সুযোগ পেয়েছি। এটি এক নিখুঁত ভক্তির মুহূর্ত ছিল, যেখানে সানাতন ধর্মের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছি।”
এই অভিজ্ঞতাটি শুধুমাত্র ভক্তির নয়, বরং এক পবিত্র আধ্যাত্মিক পুনর্জীবনও ছিল। মহা কুম্ভ মেলা, যা প্রতি ১৪৪ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়, সেই ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক মেলা অংশ হওয়ার অভিজ্ঞতা সবার কাছে বিশেষ।
মহা কুম্ভ মেলার গুরুত্ব
এটি শুধু একটি ধর্মীয় মিলনমেলা নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সমাবেশ, যেখানে অগণিত ভক্তদের মধ্যে এক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষভাবে, এই মেলার সময় লোকে বিশ্বাস করেন যে সঙ্গমে স্নান করলে সব পাপ মোচন হয়। এবং সেই স্নান করতে পারার সুযোগ পাওয়া, সঞ্জীবনী শক্তির অভিজ্ঞতা হতে পারে।
পূজা ও স্নান শেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “মা গঙ্গার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যিনি আমাকে মহা কুম্ভ মেলার অংশ হতে দিলেন। আমরা এই অভিজ্ঞতা আর কোনো সময়ে আর পাবো না, কারণ এটি এক সময়ে একবারই ঘটে।” তিনি আরও বলেন, মহা কুম্ভ মেলা আসলে এক অজেয় আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, যা পৃথিবীর সর্বোত্তম ধর্মীয় ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার স্নান
এদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও শুক্রবার প্রয়াগরাজে ত্রিবেণী সঙ্গমে পবিত্র স্নান করেন। তিনি জানান, স্নান করার সময় তিনি পূর্ণ আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভব করেছেন। এছাড়াও তিনি উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে প্রশংসা করেন, যা এই ব্যাপক মেলা সফলভাবে পরিচালনা করছে।
মহা কুম্ভ মেলার শেষ ধাপ: শিবরাত্রিতে মহাপুরাণ স্নান
মহা কুম্ভ মেলা ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল, এবং এর শেষ ধাপ শিবরাত্রিতে অনুষ্ঠিত হবে, ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটি বিশেষভাবে পবিত্র, কারণ এটি এক বিশেষ আধ্যাত্মিক উপলক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে, উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে যাতে ভক্তরা কোন সমস্যায় না পড়েন। এছাড়া, উজ্জ্বল জল, শুদ্ধ বাতাস এবং সৌম্য পরিবেশের জন্য প্রশাসন সঙ্গঠন করতে সচেষ্ট হয়েছে।
গঙ্গা নদী ও জলের গুণমানের বিষয়ে উদ্যোগ
উত্তরপ্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিংহ জানান, প্রশাসন গঙ্গার জলস্তরের মান উন্নত করতে কাজ করছে। বিশেষভাবে, জলের দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্তর বজায় রাখা হচ্ছে, যা নিরাপদ স্নানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “গঙ্গার জলের মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা নিশ্চিত করছি যে দ্রবীভূত অক্সিজেন স্তর ৯-১০ এবং বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা (BOD) তিনের নিচে থাকবে।”
সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
এছাড়াও, মহাকুম্ভ মেলা চলাকালীন সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (DGP) প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৫০টিরও বেশি FIR দায়ের করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে নজরদারি চালাচ্ছে, যাতে মেলা ও ভক্তদের প্রতি অবমাননা না হয়।
মহা কুম্ভ মেলা ভারতের সবচেয়ে বড় আধ্যাত্মিক সমাবেশ, যা প্রাচীন সভ্যতার চিহ্ন বহন করে এবং সারা বিশ্বে এর গুরুত্ব প্রচলিত। সুভেন্দু অধিকারী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ, তাদের অনুভূতি এবং ভূমিকা এ মেলাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। মাহাত্ম্যপূর্ণ এই মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় পুণ্য অর্জনের জন্য নয়, এটি মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি করার একটি সুযোগ।