রাজ্য বাজেট বিতর্কে অশোকের বিরুদ্ধে চন্দ্রিমার তীব্র কটাক্ষ

বিধানসভায় রাজ্য বাজেট বিতর্কের (Budget Debate) সময়ে তাজপুর থেকে দেউচা পাঁচামি সহ একাধিক ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থার উপর প্রশ্ন তুললেন বিজেপি…

Chandrima's Strong Criticism Against Ashok in State Budget Debate

বিধানসভায় রাজ্য বাজেট বিতর্কের (Budget Debate) সময়ে তাজপুর থেকে দেউচা পাঁচামি সহ একাধিক ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থার উপর প্রশ্ন তুললেন বিজেপি বিধায়ক এবং অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী। তবে, সেই প্রশ্নের উত্তর শুনতে বিধানসভায় অনুপস্থিত ছিলেন বালুরঘাটের বিধায়ক। তবুও থেমে থাকেননি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বাজেট বিতর্কের জবাবে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেন।

প্রায় ২.৯৬ লক্ষ কোটি টাকার রাজ্য বাজেট (Budget Debate) প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ হয়েছে। অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য একেবারে পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ব্যাখ্যা করেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় বাংলার আর্থিক পরিস্থিতি অনেক ভালো।’

   

কিছুদিন আগে, বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী রাজ্যের ঋণ এবং অনুদান প্রকল্পগুলির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার জবাবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ঋণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘ঋণ সবাই নেয়, আমরাও নিই। আমরা এফআরবিএম মেনেই রাজ্য ঋণ নিই। মোট ঋণের পরিমাণ আগামী অর্থবর্ষে ৭ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা হবে। তবে বাংলার থেকে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের ঋণ কিছু কম নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, জিএসডিপির অনুপাতে ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম সেরা পারফর্মার।’

তিনি আরও জানান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান সহ অন্যান্য রাজ্যগুলির পারফরম্যান্স খারাপ। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকার আর্থিকভাবে কতটা বঞ্চিত হয়েছে, তা আমরা উল্লেখ করেছি।’

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘মহারাষ্ট্র প্রায় ৮.১২ লক্ষ কোটি, তেলাঙ্গানা ৯.৭৫ লক্ষ কোটি, উত্তরপ্রদেশ ৮.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা ধার করেছে। কিন্তু আমাদের রাজ্য বাজেটে ধার নেওয়ার অনুমান ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা। সবাই ধার নেয়। আমরা ধার করার আইন ভাঙিনি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অশোকবাবু অনেক কথা বলেছিলেন, তবে তিনি আজ আসেননি। তিনি তো আজ আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এখানে ছিলেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ আবাস যোজনায় ৮১৪০ কোটি টাকা, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ৬৯১৯ কোটি টাকা এবং জলজীবন মিশনে ২৫২৪ কোটি টাকা রাজ্যকে দেয়নি কেন্দ্র।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে প্রায় ৩৫৮১ কোটি, স্বাস্থ্য-শিক্ষায় ৪৪৭ কোটি এবং আয়ুষে ৮০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।’ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সব পদক্ষেপ করেছে, টাকা দেওয়া যেত। কিন্তু সে টাকা দেয়নি কেন্দ্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে উত্তর শুনতে কেউ নেই। এতে আমি দুঃখিত। আমি ভেবেছিলাম ডক্টর লাহিড়ী থাকবেন। তার কাছ থেকে শিখব। এখন তো শিখতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উচ্চ পদে ছিলেন, কিন্তু তাঁকে আয়কর দিতে হয়নি।’

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বাংলার মানুষের জীবনকে মসৃণ করার চেষ্টা চলছে। তবে, কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণে রাজ্য সরকারের জন্য এটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের অবদান এবং সহায়তা চেয়েছেন।

রাজ্য বাজেটের বিতর্কের মধ্যে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি সরকারের কাজের এবং রাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধির দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জন্য যতটুকু সাহায্য করেছে, তা খুবই কম। আমরা আরও সহায়তা আশা করি, যাতে রাজ্য আরও উন্নত হতে পারে।’ রাজ্যের মানুষকে আরও ভালোভাবে জীবনযাপন করার সুযোগ দিতে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, বলেও তিনি জানান।