ভারতকে ২০৪৭ সালের অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যালস এবং এনার্জির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে রপ্তানি-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হতে হবে। এই মর্মে একটি নতুন রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা ,বেইন এন্ড কম্পানি একটি বিশ্বখ্যাত পরামর্শক সংস্থা তৈরি করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ভারতকে সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে, যা তাকে একটি নিট আমদানিকারী থেকে একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক, রপ্তানি-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করবে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যালস এবং এনার্জির মতো খাতে।” ভারতের অর্থনীতির উন্নতির জন্য এই খাতগুলোর মধ্যে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ২৩ ট্রিলিয়ন থেকে ৩৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, ভারতের জন্য বার্ষিক ৮-১০ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা অপরিহার্য। এ প্রবৃদ্ধি বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং দক্ষ কর্মশক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।
বর্তমানে ভারত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অন্য দেশগুলির উপর নির্ভরশীল। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং এর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যালস এবং এনার্জি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি ভারতকে অন্যান্য দেশ থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এই পরিবর্তনের জন্য প্রযুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতকে এআই, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল উৎপাদন খাতে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই ধরনের উন্নতি ভারতের মান এবং মুল্য চেইনে উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে এবং নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
ভারতের বিশাল এবং দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রমশক্তি একটি অতিরিক্ত সুবিধা। ২০৪৭ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ কর্ম বাজারে প্রবেশ করবে। উচ্চ-মূল্য চাকরি সৃষ্টি এবং মহিলাদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৪০-৫০ শতাংশে উন্নীত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে।
রিপোর্টে ৫টি মূল খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ভারতের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে: ইলেকট্রনিক্স, এনার্জি, কেমিক্যালস, অটোমোটিভ এবং সেবা। এই শিল্পগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক প্রবণতা রয়েছে এবং এগুলোর মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
“২০৪৭ সালের মধ্যে এই খাতগুলি সম্ভবত অর্থনীতির একটি বড় অংশে পরিণত হবে। সেবা খাত প্রায় ৬০ শতাংশ জিডিপির প্রতিনিধিত্ব করবে; উৎপাদন খাতে উন্নতি ভারতকে একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে”।
ভারতকে রপ্তানি, প্রযুক্তি এবং দক্ষ কর্মশক্তির মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার জন্য সঠিক কৌশল এবং বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪৭ সালে ভারত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যে একটি হতে পারে যদি এই ক্ষেত্রগুলোতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।