চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিশাল পরাজয়টি অপ্রত্যাশিত ছিল না৷ তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (Najmul Hossain Shanto) মনে করছেন, দলের পতনটা ঘটেছে পাওয়ারপ্লে-র সময় পাঁচটি উইকেট পড়ে যাওয়ার কারণে।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ আশা জাগানিয়া, তারা টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওপেনিং জুটিতে ছিলেন তানজিদ হাসান এবং সাউম্য সরকার, দুজনেই লক্ষ্য করেছিলেন দ্রুত রান তোলার, যাতে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় মাত্র কয়েক ওভারের মধ্যেই, যখন ভারতের পেস আক্রমণকে সামলাতে ব্যর্থ হয় তারা।
ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামি এবং হর্ষিত রানা নতুন বল হাতে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিকে বিপদে ফেলে। শামি তার দুর্দান্ত সিম পজিশন দিয়ে সাউম্য সরকারকে প্রথম বলেই পরাস্ত করেন। সরকারের ব্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়া একটি ইনসাইড এজ সরাসরি চলে যায় কেএল রাহুলের গ্লাভসে, এবং এর পর থেকেই বাংলাদেশ বধে ভারত একটানা আক্রমণ চালায়।
এরপর বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে আউট করেন হর্ষিত রানা। এই সময় শামি তার দ্বিতীয় উইকেটও তুলে নেন। মেহেদি হাসান মিরাজকে আউট করে শামি বাংলাদেশের আরও একটি উইকেট নিয়ে দেন ভারতকে। বাংলাদেশ তখন ৫ উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লে শেষ করতে পারল, স্কোর ৩৯/৫।
শান্ত ম্যাচ শেষে বলেছেন, “পাওয়ারপ্লে-তে পাঁচটি উইকেট হারানো আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল, আর এখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। হ্রিদয় এবং জাকার অনবদ্য ব্যাটিং করেছে, তবে আমাদের আরও অনেক ভুল ছিল মাঠে।”
বাংলাদেশ যখন বিপদে পড়ে, তখন হৃদয় এবং জাকার আলী একটি দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। তারা ১৫৪ রান যোগ করেন, যেখানে জাকার ১১৪ বলে ৬৮ রান করেন এবং হ্রিদয় তার প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরি তুলে ১০২ রান করেন। শান্ত বলেছেন, “হ্রিদয় এবং জাকার বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ভালো খেলেছে। আশা করি তারা আগামীতে আরও ভালো করতে পারবে।”
বাংলাদেশ ২২৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েও ভারতকে চাপিত করতে পারছিল না। ভারত ধীরে ধীরে লক্ষ্য তাড়া করতে শুরু করেছিল, শুবমন গিল এবং রোহিত শর্মা ওপেনিং জুটিতে তাদের আগ্রাসী শুরুর মাধ্যমে ৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন। শান্ত মনে করেন, যদি তারা শুরুর দিকে ভালো বলিং করে ভারতের উইকেট নিতে পারতেন, তাহলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো।
তিনি বলেছেন, “যদি আমরা নতুন বলে উইকেট পেতাম, তাহলে কিছুটা অন্যরকম হতে পারতো। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখানে খেলে এসেছি, এবং আমি নিশ্চিত যে আমাদের খেলোয়াড়রা রাওয়ালপিন্ডি-র পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে।”
এদিনের ম্যাচে ভারতের বোলিং আক্রমণ ছিল নিখুঁত, বিশেষ করে শামি এবং রানা। শান্ত, হ্রিদয় এবং জাকার আলী মুম্বাইয়ের চরম আক্রমণের মুখে একটিও বাউন্ডারি খেলার সুযোগ পাননি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিপর্যয় হলেও দলটির কমব্যাক শক্তি ছিল। তবে শুরুর মোমেন্টাম হারানোর পর তাদের পক্ষে ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না।
শান্ত আরও বলেন, “ভারতের বোলাররা যেভাবে প্রথম ওভারগুলোতে আক্রমণ করেছিলেন, আমাদের জন্য সেটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আর যেহেতু আমাদের প্রথম ছয় ওভারে উইকেট পড়ে গিয়েছিল, সেজন্য পরবর্তীতে ম্যাচে ফিরে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।”
শান্ত ও তার দল জানেন যে আগামী ম্যাচগুলোতে যদি তারা শক্তিশালী শুরুর ব্যাটিং এবং সঠিক বলিং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত বড় টুর্নামেন্টে এমন ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশের সামনে এখন আরেকটি সুযোগ রয়েছে এবং তারা জানে, নিজেদের ভুলগুলো শোধরাতে না পারলে পরবর্তী ম্যাচগুলিতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তাই, তাদের ব্যাটিং পরিকল্পনা এবং বলিংয়ের দিক থেকে আরও ধারাবাহিকতা এবং নিখুঁততা আনতে হবে।
এই পরাজয়ের পর, দলটিকে আবারও মাঠে নতুন করে নিজেদের মেলে ধরার জন্য প্রস্তুত হতে হবে, যাতে তারা ভারত বা অন্য কোনো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।