ভারতীয় ক্রিকেট দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ (ICC Champions Trophy 2025) অভিযানের শুভ সূচনা হলো বৃহস্পতিবার, দুবাইয়ে, যেখানে ভারত ৬ উইকেটে বাংলাদেশকে পরাজিত করে। ম্যাচে ভারতীয় বোলার মোহাম্মদ শামি ৫ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন, এবং ব্যাটসম্যান শুভমন গিল তার সেঞ্চুরির মাধ্যমে ভারতকে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন।
বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করে ২২৮ রানে অল আউট হয়। এই দলের পক্ষে একমাত্র দৃঢ় প্রতিরোধ গড়েন টাওহিদ হৃদয়, যিনি ১০০ রান করেন। কিন্তু ভারতের বোলিং আক্রমণ, বিশেষ করে শামির দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, বাংলাদেশকে বড় স্কোর করতে দেয়নি। ভারত লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিছুটা সংগ্রাম করলেও, গিলের সেঞ্চুরির সাহায্যে সহজেই জয় তুলে নেয়।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়
বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করে ২২৮ রান স্কোর করে, কিন্তু তাদের শুরুটা ছিল একদমই খারাপ। মোহাম্মদ শামি এবং ভারতের বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে পুরোপুরি চাপে ফেলে। প্রথম ওভারেই শামি সাউম্য সরকারকে এলবিডাব্লিউ আউট করে বাংলাদেশকে ১ রানে প্রথম উইকেট হারাতে বাধ্য করেন। এরপর, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই হারশিত রানা বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে দুই বলে ড্যাকে ফিরিয়ে দেয়, এবং বাংলাদেশ ২ রানে ২ উইকেট হারায়।
এরপর, শামি আরও একটি উইকেট তুলে নেন, মেহিদি হাসান মিরাজকে ৫ রানে আউট করে, ফলে বাংলাদেশ ২৬ রানে ৩ উইকেট হারায়। ভারতের বোলিং আক্রমণ ছিল একেবারে ধারাবাহিক, এবং একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে তারা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেয়। তবে, টাওহিদ হৃদয় এবং জাকার আলি তাদের সম্মিলিত সংগ্রহে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। ৫ উইকেটে ৩৫ রানে পড়ে যাওয়ার পর, এই দুজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ১৫৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে, বাংলাদেশকে ২২৮ রানে পৌঁছতে সহায়তা করেন।
শামির সেরা বোলিং পারফরম্যান্স
মোহাম্মদ শামি ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ৫টি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের বোলিংয়ের নেতৃত্ব দেন। তিনি তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের মাধ্যমে ম্যাচে একাধিক রেকর্ড ভেঙে দেন এবং বাংলাদেশকে প্রতিরোধ গড়তে দেয়নি। বিশেষত, বাংলাদেশ যখন ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারায়, তখন শামির বোলিংয়ে বাংলাদেশ কোনোভাবেই তাদের ইনিংস গড়ে তুলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত শামি তার পাঁচ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ২২৮ রানে আউট করেন।
ভারতের ব্যাটিং পারফরম্যান্স
ভারত ২২৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে। ওপেনিং জুটিতে রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল ভারতকে শক্তিশালী শুরু দেন। প্রথম ওভার থেকেই রোহিত শর্মা আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন, একের পর এক বাউন্ডারি মেরে ভারতের স্কোর দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যান। রোহিত ৪১ রান করে আউট হলে, ভারত ৬৯ রানে প্রথম উইকেট হারায়। তবে, গিলের দুর্দান্ত ব্যাটিং ভারতকে দৃঢ় অবস্থানে রাখে।
গিল তার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১২৫ বলের মধ্যে, যেখানে তিনি ৯টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কা মারেন। গিলের এই সেঞ্চুরি ছিল তার ক্যারিয়ারের আটম সেঞ্চুরি, এবং তিনি ভারতের ইনিংসকে গতি দিয়েছিলেন।
ভারতের মিডল অর্ডারেও কিছুটা চাপ তৈরি হলেও, কেএল রাহুল (৪১*) গিলের সাথে দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়েন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের জয়ের দিকে নিয়ে যান। রাহুল তার ইনিংসের শেষ দিকে একটি ছক্কা মারেন, যা ভারতের জয় নিশ্চিত করে দেয়। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ২৩১/৪, যেখানে গিল অপরাজিত ১০১ রান করে এবং রাহুল ৪১ রান করেন।
বাংলাদেশের বোলিং পারফরম্যান্স
বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ হোসেন ২টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ সফল বোলার ছিলেন, তবে তার বোলিং ভারতের বড় রান তাড়া আটকাতে পারেনি।তাসকিন আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট নেন, কিন্তু তারা ম্যাচে কোনো বড় প্রভাব ফেলতে পারেননি।
এই ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দলের একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল। শামি এবং গিলের নেতৃত্বে ভারত দুর্দান্তভাবে বাংলাদেশকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ তাদের অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশ যদিও লড়াই করেছে, তবে তাদের ব্যাটিং বিপর্যয়ে তারা খুব বেশি প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। ভারতের এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং তারা আগামী ম্যাচগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকবে।
ভারত আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের পরবর্তী ম্যাচে নামবে, যেখানে তারা নিজেদের ফর্ম বজায় রাখতে চায়। বাংলাদেশও ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে।