কলকাতা হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম পৌরসভাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। বিষয়টি ছিল বেআইনি নির্মাণ এবং তার ফলে শহরের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে নিরাপত্তার অভাব। প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পর পৌরসভা এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মামলার সূত্রপাত বেনিয়াপুকুর থানার একটি বেআইনি বাড়ি নিয়ে। মামলাকারী দাবি করেন, ওই বাড়িটি বেআইনিভাবে নির্মিত হয়েছে এবং তার পাশে যে রাস্তা রয়েছে তা অত্যন্ত সরু। যদি সেখানে কোনো অঘটন ঘটে, যেমন অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা, তাহলে উদ্ধারকার্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। এই কারণে তিনি আদালতে অভিযোগ জানানোর পরেও পৌরসভা কোনো পদক্ষেপ নেননি, যা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
মামলাকারীর অভিযোগের পর কলকাতা হাইকোর্ট পৌরসভাকে বিষয়টি নিয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু যখন পৌরসভা তার জবাব দেয়, তখন প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। পৌরসভার প্রতিনিধিরা জানান, তারা কিছুটা সময় চাচ্ছেন এবং আগামী সপ্তাহে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। তবে, প্রধান বিচারপতি তার জবাবের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং বলেন, “মানুষ মরে গেলে আপনাদের ঘুম ভাঙবে? তখন বাড়ি ভাঙলে হবে?”
এটি ছিল একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, যা শুধু পৌরসভাকেই নয়, বৃহত্তর প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপরও একটি বড় প্রশ্ন তোলেছিল। প্রধান বিচারপতি স্পষ্টভাবে বলেন, “ভাঙার বদলে বলছেন, যেমন কাজ চলছে চলুক, পরে দেখব। এটা আপনাদের সঠিক জবাব নয়।” আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, পৌরসভা যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়, তবে তা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এটি শুধু বেআইনি নির্মাণের বিষয় নয়, বরং শহরের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বেআইনি নির্মাণের ফলে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটলে তা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিশেষ করে, শহরের congested এলাকা এবং বাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নির্মাণকাজের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত, যা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবশ্যই নিশ্চিত করবে।
মামলার শুনানি চলাকালীন পৌরসভার তরফ থেকে জানানো হয়, তারা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করবে, যেখানে তারা স্বীকার করেছে যে, কিছু বেয়াইনি নির্মাণ হচ্ছে। তবে, তারা পুরো বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার আশ্বাসও দেয়। কলকাতা হাইকোর্টও রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়।
প্রধান বিচারপতির কড়া মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। এমনকি একটি ছোট ভুলও বড় বিপদের কারণ হতে পারে, এবং প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে তাতে কোনো বিলম্ব না করে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেওয়া।
এছাড়া, আদালত এও জানায় যে, এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শীঘ্রই কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলেই ভালো, তবে যদি তা ঘটে, তবে তার জন্য দায়ী হবে পুরসভা।
অবশেষে, আদালত ভবিষ্যতে এমন কোনো বেআইনি নির্মাণ যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য পৌরসভাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।