রাজ্যজুড়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট)। এবারের অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসা শিক্ষা নিয়ে দুর্নীতি। অভিযোগ, এনআরআই (নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান) কোটা ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়ার সময় জাল এনআরআই সার্টিফিকেট ব্যবহার করা হয়েছে। বহু শিক্ষার্থী এই সার্টিফিকেট দিয়ে ডাক্তারি ভর্তি নিয়েছেন, অথচ তাঁরা আসলে এনআরআই নন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ইডি।
ঘটনার সূত্রপাত ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় দায়ের করা একটি অভিযোগ থেকে। অভিযোগে দাবি করা হয়, এনআরআই কোটা ব্যবহার করে কিছু শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। অথচ তারা প্রকৃতপক্ষে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক ছিলেন না। এইভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এসেছে।
এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তকারীরা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। তদন্তের সময় ওই কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত নানা গরমিলের খোঁজ মেলে, যার ফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয় ইডি। পরে অভিযোগ দায়ের করার পর, ইডি শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তল্লাশি অভিযান চালাতে শুরু করে।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে কলকাতা, কাকদ্বীপ, উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের ছয়টি জায়গায় একযোগে হানা দিয়েছে ইডি। অভিযানে সহযোগিতা করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, এবং বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চলছে। সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উদ্ধার হয়েছে, তবে তদন্ত চলাকালীন এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তদের সঙ্গে এই দুর্নীতির সম্পর্ক কী তা স্পষ্ট হয়নি।
প্রাথমিকভাবে যাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে মনে করা হচ্ছে, তবে ইডি এখনো এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, এই জাল সার্টিফিকেট ব্যবহারের ঘটনায় রাজ্যের একাধিক রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে কিছু বড় রকমের গরমিল এবং দুর্নীতির সম্পর্ক থাকতে পারে।
এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত শাসক দলের কোনো কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে বিরোধী দলগুলি এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। তাঁদের দাবি, এমন দুর্নীতির মাধ্যমে কেবল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে না, বরং সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এই তল্লাশির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ইডি আরো বিশদভাবে তদন্ত করতে পারে, এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে ইডির এই ‘মেগা হান্ট’ রাজ্যে আরও নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা আগামীদিনে বড় ধরনের আলোচনার বিষয় হতে পারে।
এখন পর্যন্ত রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন ধরনের দুর্নীতি সামনে আসাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, এবং এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা আরও কমে যেতে পারে।