গঙ্গাসাগর মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে দিলীপের তীব্র আক্রমণ মমতাকে

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela) ব্যবস্থাপনাকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “মহাকুম্ভ ২০২৫”…

Dilip Ghosh Criticizes Mamata Banerjee’s Handling of Gangasagar Mela, Highlights Administration Failures

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela) ব্যবস্থাপনাকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “মহাকুম্ভ ২০২৫” এর মতো বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে, যেখানে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাতেও কোনো বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। তবে, গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনকারীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তা নজরকাড়া। যদিও গঙ্গাসাগরে এ বছর পুণ্যার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম, তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন দিলীপ ঘোষ।

এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষ ANI-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীরা কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়নি, কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজকরা যেখানে সমস্যায় পড়েছেন, সেখানে কোন দর্শকই উপস্থিত হননি। তাদের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা কঠিন হয়েছে।” তার মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি এবং পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে কোন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

   

মহাকুম্ভ ২০২৫, যা ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত, এই বছর পূর্ণতা পেয়েছে এবং এটি পূর্বানুমানিক ৪৫ কোটি মানুষের উপস্থিতি ছাড়িয়ে প্রায় ৭০ কোটি মানুষের সমাগম ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। তবে, এত বড় জমায়েতেও কোনো ধরনের বড় সমস্যা বা অরাজকতা হয়নি এবং পুণ্যার্থীরা যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নির্বিঘ্নে পুণ্যস্নান করতে সক্ষম হয়েছেন।

দিলীপ ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিক অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই সনাতন ধর্মের বিষয়ে কথা বলেন না। তাঁর কোনো আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই, আবার বিরোধী মনোভাবও নেই।” দিলীপ ঘোষের কথায়, “গঙ্গাসাগর মেলার জন্য তেমন কোনো দর্শক আসেনি, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিপদে পড়েছেন। তিনি এই ধরনের বড় ধর্মীয় উৎসবের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না।”

গঙ্গাসাগর মেলা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রতি বছর পুণ্যার্থীরা মকর সংক্রান্তির দিন পবিত্র গঙ্গা নদীর সাগরসঙ্গমস্থলে স্নান করতে আসেন। এই মেলায় বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী উপস্থিত থাকলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রস্তুতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গঙ্গাসাগর মেলাকে আয়োজিত করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সেখানে পুণ্যার্থীদের জন্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল।

এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকুম্ভ ২০২৫ নিয়ে একাধিক সমালোচনা করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে মহাকুম্ভকে “মৃত্যু কুম্ভ” বলে উল্লেখ করেছেন, যা ধর্মীয় নেতা ও পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছিলেন, “মহাকুম্ভে যে পরিমাণ অরাজকতা ঘটেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি, ফলে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।” মমতা আরও অভিযোগ করেছেন যে, মহাকুম্ভে প্রভাবশালী এবং ধনী শ্রেণীর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হলেও, সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, যার ফলে সেখানে দুর্নীতি ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পর থেকে, অনেক ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক নেতারা তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেছেন, মমতা এমনভাবে মহাকুম্ভের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করেছেন যা সনাতন ধর্মের প্রতি তাঁর অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। এর মাধ্যমে তিনি সনাতন ধর্মের মূলমন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অবমাননা করেছেন।

দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকুম্ভের আয়োজনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। তার প্রশাসন কখনোই এই ধরনের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের পরিসর ও গুরুত্বের যথাযথ মূল্যায়ন করেনি।” তার মতে, মহাকুম্ভের আয়োজকরা নিজেদের সম্পূর্ণ সাধ্যমতো কাজ করেছেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য প্রদান করেননি।

এছাড়াও, দিলীপ ঘোষ গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে বলেন, “গঙ্গাসাগরের আয়োজকরা কোনো ধরনের সঠিক প্রস্তুতি নেননি, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে সেসব সমস্যাকে উড়িয়ে দিয়েছে।” তার অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি গঙ্গাসাগর মেলার প্রতি কিছুটা মনোযোগ দিতেন, তাহলে পুণ্যার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হতো।

এই বিতর্কের মধ্যে, একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন, অন্যদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তার সমালোচনা করে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছেন। এই বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এবং এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে এক নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করেছে।