মমতার ‘মৃত্যু কুম্ভ’ মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা বিজেপি নেতা সুধাংশুর

বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee ) মহাকুম্ভ মেলা সম্পর্কিত ‘মৃত্যু কুম্ভ’ মন্তব্যকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী। তিনি বলেন, মহাকুম্ভ ভারতের…

mamata banerjee with Sudhanshu Trivedi

বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee ) মহাকুম্ভ মেলা সম্পর্কিত ‘মৃত্যু কুম্ভ’ মন্তব্যকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী। তিনি বলেন, মহাকুম্ভ ভারতের সংস্কৃতি, সামাজিক একতা এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের একটি প্রতীক, এবং এই ধরনের মন্তব্যে শুধু মমতা ব্যানার্জিই নন, বরং ইন্ডি (INDI) জোটের অন্যান্য নেতারাও ‘নিন্দনীয় মন্তব্য’ করছেন।

ত্রিবেদী বলেন, “ইন্ডি জোটের নেতারা নিয়মিতভাবে মহাকুম্ভ নিয়ে নিন্দনীয় মন্তব্য করছেন, যা ভারতের সংস্কৃতির সামাজিক ঐক্য, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ এবং বৈজ্ঞানিক সততার প্রতীক। মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যও তারই একটি উদাহরণ। এটা ইন্ডি জোটের হিন্দু ধর্মের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। তাদের মন্তব্য স্বাভাবিক নয়, এটি একটি চক্রান্তের অংশ।”

   

এছাড়াও, তিনি মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যকে ভারতের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অসম্মান বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, “মহাকুম্ভ একটি পবিত্র উৎসব, যেখানে লাখ লাখ ভক্ত একত্রিত হন। এটি শুধু ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসের অংশ নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক ঐক্য এবং বিশ্বাসের প্রতীক।”

এর আগে, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি অত্যন্ত নিচু মানের ভাষা ব্যবহার করেছেন। মহাকুম্ভ একটি অত্যন্ত পবিত্র উৎসব, যেখানে ভক্তরা আধ্যাত্মিক শান্তি এবং আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। এই ধরনের মন্তব্য হিন্দু ধর্মের প্রতি অসম্মানজনক। তার মন্তব্য তার মানসিকতার প্রতিফলন।”

শিবরাজ সিং চৌহান আরও বলেন, “এটা তাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে সনাতন ধর্মকে অসম্মান করার। সনাতন ধর্ম হাজার হাজার বছর ধরে গঙ্গার মতো প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষের বিশ্বাস, অনুভূতি এবং ধর্মকে আঘাত করা একটি অপরাধ।”

মমতা ব্যানার্জির ‘মৃত্যু কুম্ভ’ মন্তব্যের পর, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারও তার মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি সবসময় হিন্দুদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশে পরিণত করতে চান। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এই কাজ করছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে ‘মৃত্যু কুম্ভ’ বানিয়ে দিয়েছেন। মহাকুম্ভ একটি পবিত্র স্থান, সেখানে খুব ভালো ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তবে তিনি ভোটের আগে মানুষকে উস্কে দেওয়ার জন্য এই মন্তব্য করেছেন।”

মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজে ঘটে যাওয়া পদদলিত ঘটনায় কুম্ভ মেলার আয়োজকদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই ‘মৃত্যু কুম্ভ’… আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি, আমি গঙ্গামাকে সম্মান করি। তবে সেখানে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে?” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ধনীদের জন্য এক লাখ টাকার ক্যাম্প ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু গরীবদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।”

মমতা ব্যানার্জি তার বক্তব্যে পদদলিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “মেলা এমন একটি স্থান, যেখানে পদদলিত ঘটনা ঘটতেই পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। কী পরিকল্পনা করা হয়েছে?”

এদিকে, কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, মহাকুম্ভ মেলা ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ এবং এটি দেশের একতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অসম্মান করা হচ্ছে।

এছাড়াও, মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের পর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে রাজনৈতিক চাপানউতোর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে যে মমতা ব্যানার্জি ভোটের আগে এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করছেন, যাতে তিনি নির্বাচনী সমর্থন পেতে পারেন। তাদের মতে, এই ধরনের বক্তব্য সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি দেশের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এদিকে, বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে মমতা ব্যানার্জি হিন্দু ধর্মের প্রতি অসন্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিকর মন্তব্য করে আসছেন। তারা দাবি করেছেন, এই ধরনের মন্তব্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এসেছে, যা দেশের ধর্মীয় ঐক্যকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।

এটি পরিষ্কার যে, মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ধরনের মন্তব্য আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাভুটিতে।