সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বাজেট ঘোষণা হয়েছে, যেখানে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের কথা শুনে খুশি হয়েছেন ঘাটালের সাংসদ দেব অধিকারী। দিন কয়েক আগেই তিনি সাংসদ পদে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন, কিন্তু এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল যে তিনি রাজনীতিতে থেকে অব্যাহতি নিতে চেয়েছিলেন। তেমনি ভাবে যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও রাজনীতির বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারও রাজনৈতিক দায়িত্ব অব্যাহতই রয়ে গেছে।
দেব, যিনি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে ফের ঘাটাল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন, তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। তবে তার ফিরে আসার মূল কারণ নিয়ে এবার সরাসরি মন্তব্য করেছেন দেব। তিনি বলেছেন, “আমার রাজনীতিতে ফিরে আসার একটাই কারণ, তা হল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। দিদি কথা দিয়েছিলেন ঘাটালের মানুষদের। আমি দিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।” এই মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়ায় দেব খুশি, এবং তা নিজেই জানিয়েছেন।
ঘাটাল শহরটি একটি বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে। এখানে শিলাবতী নদী প্রবাহিত হয়, এবং শহরটি গামলার মতো গঠিত হওয়ায় বর্ষাকালে খুব সহজেই প্লাবিত হয়ে পড়ে। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে যায়, যা এলাকাবাসীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে ওঠে। এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজমান, এবং এর সমাধানে রাজ্য সরকার একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যেটি “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান” নামে পরিচিত।
এটি একটি জলবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, যার মাধ্যমে শহরটির আশপাশের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে অতীতে কেন্দ্রের অসহযোগিতার কারণে এই প্রকল্পের কাজ এগোতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু গত বছর থেকে রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য অর্থ বরাদ্দ শুরু করেছে এবং এর কাজও শুরু হয়েছে।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায়, প্রথমেই ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হবে, যাতে শহরের প্লাবন প্রতিরোধ করা যায়। এই কাজের জন্য রাজ্য সরকার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পাশাপাশি, পুরো প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি টাকা আরও বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে ঘাটাল শহরের জলবদ্ধতার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে বলে আশাবাদী স্থানীয় জনগণ।
দেবের আশা, এই কাজ আগামী দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে ঘাটালের মানুষদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হবে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের মতো প্রকল্পে রাজ্য সরকারের গুরুত্ব ও ভূমিকা গভীরভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং এর সফল বাস্তবায়নে রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে সহায়তা মিলছে।
এ দিন, দেব আরো বলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শেষ হলে এখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। আমি এই পরিকল্পনার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এর ফলে এলাকার মানুষদের জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে কমবে।” তিনি আরো জানান, ঘাটালের উন্নতির জন্য তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে।