ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) ইস্টবেঙ্গল এফসির (East Bengal FC) পারফরম্যান্স বরাবরই হতাশাজনক। টুর্নামেন্টে তারা এখনও পর্যন্ত চার মরশুম খেলেছে, কিন্তু একবারও প্লে-অফে জায়গা করতে পারেনি। লাল-হলুদ সমর্থকরা তাদের দলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই তাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। এবারও সেই একই চিত্র। ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল, কিন্তু এই ম্যাচে জয়লাভ সত্ত্বেও তারা প্লে-অফের দৌড়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নিতে পারবে না, এমনটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে মশাল সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ ও হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য সমর্থকদের একাংশ নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোকে (Oscar Bruzon) দোষারোপ করছেন। গত কয়েক মরসুমে দলের কোচ হিসেবে তাঁর দায়িত্বে ইস্টবেঙ্গল তেমন কোনো সাফল্য পায়নি। দলের খারাপ পারফরম্যান্সের ফলে সমর্থকরা তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে, সঞ্জয় সেনকে (Sanjoy Sen) দলের হেড কোচ হিসেবে দেখতে চাওয়া হচ্ছে। সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে বাংলা ফুটবল দল সদ্য সন্তোষ ট্রফি জয় করেছে এবং মোহনবাগানকে আই লিগের শিরোপা এনে দেওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। এই কারণে সমর্থকরা আশা করছেন যে, সঞ্জয় সেন ইস্টবেঙ্গলকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারেন।
এতসব কিছুর মাঝে ইস্টবেঙ্গল চলতি মরসুমে কোচিং পরিবর্তনও করেছে। প্রথমে কার্লেস কুয়াদ্রাত কোচ হিসেবে আসেন, কিন্তু শুরুতেই ছয় ম্যাচে পরপর হার পরিলক্ষিত হয়। এরপর কুয়াদ্রাত দায়িত্ব ছেড়ে স্পেনে ফিরে যান। তারপর, বিনো জর্জকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু সেই পরিবর্তনও কিছু কাজে আসেনি। দলের দলে কোনো পরিবর্তন বা রদবদল তেমন কোনো ফল দেয়নি। এরপর অস্কার ব্রুজোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর অধীনে দলের পারফরম্যান্স একটু উন্নতি করেছিল, বিশেষ করে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে, সেই পারফরম্যান্সের সাফল্য কেন আইএসএলে এসে থামল? সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
এই মরসুমের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টবেঙ্গল আপাতত টেবিলের ১১তম স্থানে রয়েছে। ২০ ম্যাচে তারা মাত্র ২১ পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে। গত কয়েক ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স মোটেও সন্তোষজনক নয়। তাদের থেকে ১৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে প্লে-অফে যোগ্যতা অর্জনকারী দলের অবস্থান স্থির হয়েছে। একদিকে যেখানে মুম্বই সিটি এফসি ২০ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে, সেখানে ইস্টবেঙ্গল শুধু পিছিয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য প্লে-অফে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
প্লে-অফে যাওয়ার যে স্বপ্ন সমর্থকরা দেখেছিলেন, সেটি এখন নিঃসন্দেহে মাটিতে পড়ে গেছে। গত মরসুমে যে পরিস্থিতি ছিল, তা থেকে আরও খারাপ অবস্থায় এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পরও দল বারবার তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না, যার ফলে ক্রমেই তাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। মাঠে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের সাথে সাথে কোচিং স্টাফের দায়িত্ব পালনে যে ঘাটতি রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। তবে আগামী দিনে দলের সমর্থকদের লক্ষ্য এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও সাফল্য অর্জন করা.