অমৃতসর: আমেরিকার সামরিক বিমানে করে আরও ১১৬ জন অবৈধ অভিবাসীকে দেশে ফেরাল ট্রাম্প সরকার। এই শরণার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই শিখ সম্প্রদায়ের সদস্য। কিন্তু, যখন এই শরণার্থীরা অমৃতসর বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখন তাঁদের মাথায় পাগড়ি ছিল না, যা শিখদের পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শিরোমণি গুরুদ্বারা পারবন্ধক কমিটি (SGPC) এই ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেছে। SGPC-এর সাধারণ সম্পাদক গুরচরণ সিং গ্রেওয়াল বলেন, “পাগড়ি শিখদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রকীত। এটি তাঁদের পরিচয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিখদের পাগড়ি খুলে নেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও জানান, SGPC এই বিষয়ে আমেরিকার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে প্রস্তুত।
একাধিক শরণার্থী জানিয়েছেন, আমেরিকায় অবৈধভাবে প্রবেশের সময় তাঁদের পাগড়ি খুলে নিতে বলা হয়েছিল। দেশে ফেরার সময় তাঁদের শেকলে বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল, যা তাঁদের কাছে অত্যন্ত অপমানজনক৷ একজন শরণার্থী জানান, “আমরা যখন আমেরিকায় পৌঁছাই, তখন আমাদের পাগড়ি খুলে ফেলতে বলা হয়। উড়ানের সময় আমাদের শেকলে বাঁধা ছিল৷ এই অভিজ্ঞতাটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর৷’’ এ ঘটনার পর, শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভাগবন্ত মান এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক যে, সরকার আমেরিকার কাছে ভারতের মর্যাদা কমিয়ে দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত।”
এদিকে, শিরোমণি আকালি দল নেতা বিক্রম সিং মজিথিয়া এই ঘটনাকে “শিখ সম্প্রদায়ের প্রতি অবমাননা” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ভারত সরকারকে আমেরিকার কাছে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের পর এই ঘটনা ঘটেছে৷ ইতিমধ্যেই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন শিখ ধর্মাবলম্বীদের পাগড়ি সম্পর্কিত বিষয়টি যথাযথভাবে আলোচনায় আনা হয়নি।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
SGPC এবং অন্যান্য শিখ সংগঠনগুলো সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে শিখ ধর্মাবলম্বীদের পাগড়ি ছাড়া ফেরত পাঠানো না হয়। তারা দাবি করেছে, শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করতে ভারত সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
এছাড়া, শিরোমণি আকালি দলও সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, বিদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।
এটি স্পষ্ট যে, শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে। SGPC এবং অন্যান্য শিখ সংগঠনরা এই বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে। এখন ভারত সরকার এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দেখার বিষয়।