আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযান চলমান থাকায়, রবিবার রাতে তৃতীয় ভারতীয় ডিপোর্টি (Indian Deportees) দলের ১১২ জন সদস্যকে নিয়ে একটি ইউএস মিলিটারি বিমান আমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এই দলের মধ্যে অধিকাংশই হরিয়ানার বাসিন্দা ছিলেন। আমৃতসর বিমানবন্দরে তাদের নামানোর সময় এদের মধ্যে ৪৪ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের, ৩১ জন পাঞ্জাবের, ২ জন উত্তরপ্রদেশের এবং ১ জন করে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ছিলেন।
এদিন আগে শনিবার রাতে ১১৯ জন ভারতীয় ডিপোর্টি আরেকটি মিলিটারি বিমানে অমৃতসরে পৌঁছান। সেই দলের মধ্যে ৬৭ জন পাঞ্জাবের, ৩৩ জন হরিয়ানার, ৮ জন গুজরাটের, ৩ জন উত্তরপ্রদেশের, ২ জন করে গোয়া, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের, এবং ১ জন করে হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা ছিলেন।
এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় ডিপোর্টিদের নিয়ে তৃতীয় বিমান অবতরণ, তবে এই ঘটনায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের পক্ষ থেকে বিরোধিতার সুর শোনা গেছে।
পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি: অমৃতসরের বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রতিবাদ
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “আমৃতসর শহরটি পবিত্র, এবং এটি দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। আমাদের এ শহরকে ডিপোর্টেশন সেন্টারে পরিণত না করার আহ্বান জানাচ্ছি।” তিনি উল্লেখ করেন, “আমৃতসর গোল্ডেন টেম্পল, দুর্গিয়ানা মন্দির, রাম তীরথ মন্দির, জালিয়ানওয়ালা বাগ, গোবিন্দগড় ফোর্টের জন্য সুপরিচিত। যদি ভ্যাটিকান সিটিতে এমনভাবে ডিপোর্টি ফ্লাইটের অবতরণ হতো, তাহলে কি তারা সেই অনুমতি দিত?” তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের উচিত ছিল এই বিমানগুলির অবতরণের জন্য অন্য বিমানবন্দর ব্যবহার করা, যেমন দেশের বিভিন্ন এয়ারবেস।
পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের ফ্লাইট অবতরণের জন্য অমৃতসরের বিমানবন্দর ব্যবহার না করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা মনে করেন যে, এটি শহরের ভাবমূর্তি এবং পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।
ডিপোর্টিদের শিকল ও হাতকড়া: যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ
শনিবার রাতে অবতরিত বিমান থেকে যেসব ডিপোর্টি নেমে এসেছেন, তারা দাবি করেছেন যে, পুরো যাত্রাপথে তাদের হাতকড়া এবং পায়ে শিকল পরানো ছিল। একজন ডিপোর্টি, দালজিত, সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের পা শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল, এবং হাতও হাতকড়া দিয়ে বাঁধা ছিল।” অন্য এক ডিপোর্টি, সৌরভ, বলেন, “আমরা পুরো যাত্রা জুড়ে শিকল পরেই ছিলাম।” এই অভিযোগটি তাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে, যা তারা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “যদি ডিপোর্টিরা এমন শারীরিক নিগ্রহের শিকার হন, তা হলে ভারত সরকারের উচিত এই বিষয়টি বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরা।” তিনি দাবি করেন, ভারতের সরকারের উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানানো। তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, এবং ভারতীয় নাগরিকদের এমন শারীরিক শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ এবং দেশের আইনগত পদক্ষেপ
ভগবন্ত মানের এই ধরনের আপত্তির পরে, পাঞ্জাব সরকার এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিকবার সতর্ক করেছে। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া যে কোনও দেশের জন্য অসম্মানজনক হতে পারে, তা ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পাঞ্জাব সরকার আরও মনে করে, এমন অবস্থায় ভারতীয় সরকারের উচিত ছিল ডিপোর্টিদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা, এবং কোনভাবেই এমন শৃঙ্খলা ভঙ্গ না হওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
এছাড়া, এই ঘটনা আরো একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তা হল—ভারত কি যথাযথভাবে তার নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান করছে? এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে, এবং তা রোধে শক্তিশালী আইনগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ডিপোর্টেশন ফ্লাইটে আসা ভারতীয়দের নিয়ে এই বিতর্ক, শুধুমাত্র একটি দেশীয় বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নাগরিক মর্যাদার বিষয়। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের আপত্তি, এবং ডিপোর্টিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের বিষয়টি এক নতুন আঙ্গিকে আলোচিত হচ্ছে। ভারত সরকারের উচিত, এই বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়। ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং সম্মান নিশ্চিত করা, দেশের আইনগত কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত।