শনিবার রাতে দিল্লি স্টেশনে একটি মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহেলার জন্য দায়ী করে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ জানিয়েছে, অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক শকুন হিসেবে আক্রমণ করেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের অবহেলা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের আন্তরিক সমবেদনা নিহতদের পরিবারের প্রতি। শোকগ্রস্তদের দ্রুত সুস্থতার প্রার্থনা করছি। কিন্তু এই ঘটনা একবার আবারও সরকারের অবহেলা ও রেলওয়ের ব্যর্থতা তুলে ধরছে।”
কংগ্রেস সভাপতি মালিকার্জুন খাড়গে বলেন, “এই ভিডিওগুলো অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। নরেন্দ্র মোদির সরকার এই ঘটনার প্রকৃত তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
পূর্ব চত্তীসগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও সরকারের প্রতি আক্রমণ করে বলেছেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটে চলছে, যার মূল কারণ প্রশাসনিক অবহেলা। কে এর জন্য দায়ী হবে?” তিনি আরও বলেছেন, “প্রয়াগরাজে যাওয়া ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। কেন্দ্রীয় এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”
বিজেপির পাল্টা জবাব
বিজেপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতা অজয় আলোক বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে “রাজনৈতিক শকুন” হওয়া এবং ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এরা সব সময় এই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করতে অভ্যস্ত। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিরোধী নেতাদের মধ্যে কেউ কি আহতদের হাসপাতালে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন? না।”
পদপিষ্টের ঘটনা
শনিবার রাতে দিল্লি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ১৪-এ বহু যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন প্রয়াগরাজ যাওয়ার জন্য। তবে সুত্র অনুযায়ী, ‘স্বতন্ত্র সেনানি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে মধ্যরাতে যাত্রা শুরু করায় অতিরিক্ত যাত্রীদের জমায়েত ঘটে। এর ফলে প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক ভিড় হয়ে যায় এবং পদদলনের ঘটনা ঘটে। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মে জমে থাকা যাত্রীদের মধ্যে কোনো জায়গা না থাকায় হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৯ জন মহিলা, ৫ জন শিশু এবং ৪ জন পুরুষ। সবচেয়ে বেশি বয়সী যাত্রী ছিলেন ৭৯ বছর বয়সী এবং সবচেয়ে কম বয়সী ছিলেন সাত বছর বয়সী একটি শিশু।
তদন্ত এবং সরকারী সহায়তা
দিল্লি পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করবে যাতে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়। পাশাপাশি ভারতীয় রেলওয়ে নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। গুরুতর আহতদের জন্য ২৫ লাখ এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এ ঘটনা একটি বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যেখানে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে ব্যাপক বচসা চলছে। রাজনৈতিক মন্তব্যের পাশাপাশি, নিহতদের পরিবারদের প্রতি সহানুভূতির বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?