কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল ইতিহাস তৈরি করেছে এক অসাধারণ সাফল্যের মধ্য দিয়ে। মাত্র পাঁচ দিনে ১৭৫টি গলব্লাডার অপারেশন সম্পন্ন করেছে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা, যার সব ক’টি সফল হয়েছে। একটিও অপারেশন ব্যর্থ হয়নি, যা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নতুন একটি রেকর্ড গড়ল। এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে ১৫ জন চিকিৎসকের অবিরাম পরিশ্রম, দক্ষতা ও নিষ্ঠার ফলে। রাজ্য তথা দেশের চিকিৎসা খাতে এই ঘটনা নজিরবিহীন, যা সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা ও গুণগত মানের এক চমকপ্রদ প্রমাণ।
একমাত্র এসএসকেএম হাসপাতালই এত দ্রুত এবং সফলভাবে ১৭৫টি গলব্লাডার অপারেশন করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে চিকিৎসকরা প্রতিদিন গড়ে ৩০টিরও বেশি অস্ত্রোপচার করেছেন। এই কাজে সহযোগিতা করেছেন হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য কর্মীরা, যাদের নিরলস শ্রম ও সেবা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হতো না। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং মানের যে উন্নতি হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এক্স হ্যান্ডলে উল্লখ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অর্জনকে দেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সুপার স্পেশালিটি সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম এক নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত ৫ দিনে ১৭৫টি গলব্লাডার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “এটি শুধু একটি সাধারণ উদ্যোগ নয়, এটি প্রমাণিত করেছে যে, যদি আমাদের চিকিৎসকরা একসঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।”
মুখ্যমন্ত্রী তার বার্তায় আরও বলেন, “এটি একটি বিশেষ উদ্যোগ ছিল, যা দ্রুত সময়ে গলব্লাডার রোগীদের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।” তিনি এই মডেলকে দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলির জন্য উদাহরণ হিসেবে দেখানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই মডেলটি অনুসরণ করলে দেশের সব হাসপাতালেই ‘মিশন মোড’ উদ্যোগ গ্রহণ করে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হবে।”
এছাড়া, ৫ দিনের এই বিশেষ উদ্যোগের বাইরে এসএসকেএম হাসপাতাল আরও ৩৯০টি বড় অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, যা সাধারণত আরো দীর্ঘ সময় নেয়। এই সফলতা শুধু হাসপাতালের কর্মীদেরই গর্বের বিষয় নয়, বরং তা রাজ্যের জনগণের জন্য একটি বড় আশা ও প্রেরণা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় আরও গতিশীলতা আনা সম্ভব হয়েছে, এবং এর ফলে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ সহজে সঠিক চিকিৎসা পাবেন।”
এখন প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি এই মডেলকে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালেও কার্যকরী করবে? মুখ্যমন্ত্রী একেবারে স্পষ্ট করেছেন, “এই সাফল্য দেশের সব হাসপাতালেই অনুসরণ করা উচিত, যাতে প্রতিটি রোগী দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়।”
এসএসকেএম হাসপাতালের এই সাফল্য রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির এক বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং আশা করা যায়, এটি অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।