শনিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আমেরিকার সামরিক বিমান সি১৭ গ্লোবমাস্টার তিন অমৃতসরে অবতরণ করেছে, সঙ্গে নিয়ে এসেছে ১১৯ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে। এই ১১৯ জনের মধ্যে ৬৭ জন পঞ্জাবের বাসিন্দা, ৩৩ জন হরিয়ানা থেকে, আটজন গুজরাতের, তিনজন উত্তরপ্রদেশের, দুজন গোয়ার, দুজন মহারাষ্ট্রের, দুজন রাজস্থানের, এক জন হিমাচল প্রদেশের এবং এক জন জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা। এভাবে ফেরত পাঠানো অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, আর তাতেই যুক্ত হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আমেরিকা থেকে প্রথম দফায় ১০৪ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু, সে সময় একটি বিতর্কও তৈরি হয়েছিল, কারণ ওই ১০৪ জনকে হাতকড়া এবং শিকলে বেঁধে ফেরত আনা হয়। এই বিষয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানান, “আমেরিকার আইন অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের শিকলে বেঁধে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।” এই ব্যাখ্যায় এক ধরনের সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিল ভারত, তবে সমালোচনা এবং বিতর্ক থেমে থাকেনি।
এবার, শনিবার রাতে ফের মার্কিন বিমান সি১৭ গ্লোবমাস্টার তিন-এর মাধ্যমে ১১৯ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হলো। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রবিবার রাতে আরও একটি মার্কিন বিমান অবতরণ করতে পারে, যা নিয়ে আরও ১৫৭ অবৈধ ভারতীয় নাগরিককে নিয়ে আসবে। তবে, ওই বিমানের অবতরণের সঠিক সময় সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার মধ্যে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে ফিরেছেন। আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল অবৈধ অভিবাসীদের ফিরে আসার সমস্যা, এবং সেই প্রসঙ্গে ভারত সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমেরিকা ফেরত এই ভারতীয় অভিবাসীদের গ্রহণ করতে তারা প্রস্তুত।
এদিকে, ওই ১১৯ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন যে, একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়। তবে, এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যাদের মধ্যে শিকল পরানোর অভিযোগ উঠেছিল, তাদের ব্যাপারে কোন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এছাড়া, রাজনৈতিক মহলে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া ভারতের জন্য ‘অপমানজনক’ হতে পারে। বিশেষ করে, হাতকড়া বা শিকল পরানোর বিষয়টি নিয়ে নানা বিতর্ক সামনে আসছে। তারা দাবি করছেন, এমনভাবে ফেরত পাঠানোর বদলে আরো মানবিক পন্থায় এই বিষয়টি সমাধান করা উচিত ছিল।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আমেরিকা-ফেরত এই অভিবাসীদের সঠিকভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শরণার্থী আইনের আওতায় ফেরত নেওয়া হবে। তবে, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা হবে, তা সময়ই বলবে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভিবাসী নীতি নিয়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে যে আলোচনা চলছে, তা ভবিষ্যতে আরও জটিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।