বাড়িতে তখনও শোওয়ানো বাবার মৃতদেহ। শোকের ছায়া পরিবারে। সেই শোক ভুলে চোখের জল আটকে মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা দিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছল পাণ্ডুয়ার মুসকান খাতুন। ছাত্রীর মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আর মুসকান এবিষয়ে বলছে, তার বাবা চেয়েছিলেন, সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। সেই স্বপ্নকেই সত্যি করতে চায় সে।
পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তারাজল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কায়েম গতকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পূর্ব বর্ধমানের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মুসকান খাতুন জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছে এবার। পাণ্ডুয়া হাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুসকান। তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে বৈঁচী বাটিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
শনিবার সকালে মুসকান যখন পরীক্ষা দিতে বেরোচ্ছে, তখন বাড়িতে তাঁর বাবার নিথর দেহ শায়িত। সে যখন অঙ্ক পরীক্ষা দিচ্ছে, তখনই চলছে বাবার শেষকৃত্য। বাটিকা বৈঁচী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দীপ্তেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, খবর পাওয়ার পরই পরীক্ষাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হয়। তিনি বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাবার মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। তবে ছাত্রীটির মানসিক দৃঢ়তা দেখে ভাল লাগছে।”
পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে মুসকান জানায়, “শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। আজ এগারোটায় শেষকৃত্য হবে। বাবা সবসময় বলতেন, ‘তুই পড়াশোনা কর, জীবনে বড় হবি।’ আমি বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করব।”
স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মুসকানের মা। তার মধ্যেও মেয়েকে পরীক্ষা দিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বললেন, “মেয়ের পরীক্ষা রয়েছে। তার বাবা সবসময় বলত, ‘ভাল করে পড়াশোনা কর’। আমরা সবাই মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছি যাতে ও পরীক্ষা দিতে পারে।”
বড় শোকের মধ্যেও পরীক্ষার হলে উপস্থিত থাকার জন্য মুসকানের এই মানসিক দৃঢ়তা সকলের জন্য এক বিরল উদাহরণ হয়ে থাকল।