সোনার বিনিয়োগকারীরা জন্য গত ২৫ বছর ধরে সবচেয়ে ভালো রিটার্ন পেয়েছে এবং এটি S&P 500 এবং Nifty50 এর মতো প্রধান স্টক মার্কেটের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে, এমনই তথ্য উঠে এসেছে Aequitas-এর এক নতুন প্রতিবেদনে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে সোনার রিটার্নস প্রতিনিয়ত ভালো হয়েছে এবং এই ধাতুটি মার্কিন ও ভারতীয় শেয়ার বাজারের তুলনায় অধিক লাভজনক হয়ে উঠেছে।
রিপোর্টে দেখা যায় যে ২০০০ সাল থেকে সোনা তার রিটার্নে ৯.৯৯ গুণ বৃদ্ধি করেছে, যেখানে একই সময়কালে S&P 500 মাত্র ৪.৩৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, সোনা S&P 500 এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি লাভ দিয়েছে।
এদিকে, ভারতীয় মুদ্রা হিসাবেও সোনার বৃদ্ধি Nifty50-এর তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ২০০০ সাল থেকে সোনার রিটার্নস ১৯.৩২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন Nifty50 বেড়েছে ১৫.৬৭ গুণ। এর মানে হলো, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ করে অধিক লাভ পেয়েছেন তুলনায় শেয়ার মার্কেটের তুলনায়।
সোনার মূল্যায়নকে একটি মূল্যবান বিনিয়োগ বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে, বিশেষত অনিশ্চিত সময়ে। সোনা ঐতিহাসিকভাবে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং তার মূল্য বৃদ্ধি সোনাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা সাধারণত সোনাকে আর্থিক সংকট এবং বাজারের অনিশ্চয়তার সময় একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবেই গ্রহণ করেন। সোনার মূল্য বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন ডলার ইনডেক্সের দুর্বলতা এবং মার্কিন ট্যারিফ নীতির মধ্যে স্থিতিশীলতা।
LKP সিকিউরিটিজের গবেষণা বিশ্লেষক জতীন ত্রিবেদি মন্তব্য করেছেন, “সোনার দাম একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রেখেছে, যা দুর্বল ডলার ইনডেক্স এবং মার্কিন ট্যারিফ নীতির দৃঢ় সমর্থন দ্বারা চালিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “শুক্রবার MCX-এ সোনার দাম ৪৭৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৮৬,২৮০ টাকায় পৌঁছেছে, এবং কমেক্স সোনা ১৮ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২,৯৩৫ ডলারে বাণিজ্য করছে।” ত্রিবেদি বলেছিলেন, আসন্ন মার্কিন খুচরা বিক্রয় এবং মূল খুচরা বিক্রয় ডেটা সোনার দামের চলাচলকে প্রভাবিত করতে পারে।
বর্তমানে, বিনিয়োগকারীরা সোনাকে তাদের পোর্টফোলিওতে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন। বিশেষত যখন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, সোনা তখন ‘সেফ হেভেন’ হিসেবে কাজ করে এবং তার মূল্যের বৃদ্ধি প্রদর্শন করে যে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী বিকল্প।
সোনার মূল্য বৃদ্ধি, বিশেষত মার্কিন ডলার এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত, একটি বড় প্রভাব ফেলেছে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজার ও স্টক মার্কেটের রিটার্নে। যখনই শেয়ার বাজারে বড় ওঠাপড়া ঘটে, তখনই সোনা তার স্থান ধরে রেখে একে অপরকে ছাড়িয়ে যায়।
প্রতিবেদনটি যে উপসংহারে পৌঁছেছে তা হলো, সোনা একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থিতিশীল বিনিয়োগ বিকল্প হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং পুঁজিবাজারের ওঠানামা চলতে থাকার পর সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।
এটি মনে রাখতে হবে যে সোনা শুধুমাত্র একটি মূল্যবান ধাতু নয়, বরং একটি দারুণ দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সুরক্ষা প্রদানকারী সম্পদ। সোনায় বিনিয়োগ করে দেশের বাইরে এবং দেশে বিভিন্ন মুদ্রার বিরুদ্ধে শক্তিশালী লাভের আশা করা যেতে পারে।
বিশ্ব বাজারে সোনার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে, এবং এটি একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ বিকল্প হয়ে উঠেছে। ২০০০ সাল থেকে, সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক সম্পদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষত যখন মার্কিন এবং ভারতীয় শেয়ার বাজারের তুলনায় সোনার রিটার্ন অনেক বেশি। ভবিষ্যতে, সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং লাভজনক বিকল্প হিসাবে কাজ করতে থাকবে।