ভারতের আয়কর কাঠামো আরও সহজ করতে এবং MSMEs (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) সেক্টরের উন্নতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাড়াতে নতুন আয়কর বিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI)। আয়কর সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে ICAI বলছে যে, নতুন আয়কর বিল দেশের ছয় দশকের পুরনো আয়কর কাঠামোকে আরও সহজতর করবে এবং MSME সেক্টরের বিকাশে সহায়ক হবে।
নতুন আয়কর বিলের মাধ্যমে ভারতীয় সরকারের উদ্দেশ্য হল দেশের আয়কর কাঠামোকে সরল করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট ট্যাক্স পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই বিলটি লোকসভা (Lok Sabha) -তে গত বৃহস্পতিবার উত্থাপিত হয়েছে এবং এটি মূলত আয়কর ক্ষেত্রে লিটিগেশন কমানোর এবং নতুন ব্যাখ্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে। এটি দেশের পুরানো আয়কর কাঠামোকে আরো সহজ করতে, অপ্রয়োজনীয় প্রভাইসো এবং ব্যাখ্যাগুলি সরিয়ে ফেলতে এবং একটি সহজ এবং পরিষ্কার আইনি কাঠামো তৈরি করতে উদ্ভাবিত হয়েছে।
ICAI-র প্রেসিডেন্ট চরঞ্জিত সিং নন্দা বলেন, “নতুন আয়কর বিলটি MSME সেক্টরের বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।” তিনি আরও বলেন, “এই বিলটি ভারতের আয়কর কাঠামোকে সরল করার পাশাপাশি দেশটির অর্থনীতির শক্তিশালী বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
এছাড়াও, বিলটির মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে যা MSME প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর বিলটি বেশ কিছু ধারাকে সহজ করে দিয়েছে এবং গুচ্ছ আয়কর প্রদানের বিধানগুলিকে একটি একক অনুচ্ছেদে রূপান্তরিত করেছে।
নতুন আয়কর বিলের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষত, “পূর্ববর্তী বছর” এবং “মূল্যায়ন বছর”-এর ধারণাগুলির পরিবর্তে “ট্যাক্স বছর” এবং “ফিনান্সিয়াল বছর” শব্দাবলী প্রবর্তন করা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি আয়কর বিধিকে আরও পরিষ্কার এবং সহজবোধ্য করবে। এছাড়াও, বিলের মাধ্যমে সব TDS (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) প্রোভিশন একক একটি সেকশনে রাখা হয়েছে এবং এটি একটি সারণী আকারে উপস্থাপিত হয়েছে, যার ফলে এটি আরও সহজে বোঝা যাবে।
এছাড়াও, বিলের মাধ্যমে যে সমস্ত প্রেস্ক্রিপটিভ ইনকাম প্রোভিশনগুলি তৈরি করা হয়েছে তা আরও পরিষ্কারভাবে গ্রুপ করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন শ্রেণির আয়কর প্রদানকারীদের জন্য পদ্ধতিটি সহজতর হবে।
নতুন আয়কর বিলটি অনেক ক্ষেত্রেই আইনি ভাষার জটিলতা কমিয়েছে এবং সারণী ব্যবহার করে কথা বলার সহজ উপায় তৈরি করেছে। এর ফলে, নতুন বিলটির শব্দ সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে, যা আগের আয়কর আইনের তুলনায় এটি আরও সংক্ষিপ্ত এবং সহজবোধ্য।
এই বিলটি আয়কর আইনকে আরও সরল এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করতে সহায়ক হবে, যার ফলে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণের জন্য ট্যাক্স সম্পর্কিত বিষয়গুলি বুঝতে সহজ হবে।
আয়কর বিলের মধ্যে কিছু নতুন প্রস্তাবিত ধারাও রয়েছে যা ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ‘নির্দিষ্ট কর্মচারী’দের জন্য বেতন থ্রেশহোল্ড বাড়ানো, ছোট প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাস্টগুলির জন্য সরলীকৃত বিধান এবং ব্যবসায়িক ট্রাস্টগুলির জন্য দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভকে ১২.৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া, ২০২৫ সালের বাজেটে যে পরিবর্তনগুলি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলিও নতুন বিলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
নতুন আয়কর বিলটি ভারতে আয়কর কাঠামোকে আরো সোজা এবং কার্যকরী করে তুলতে সহায়ক হবে। এটি ভারতের MSME সেক্টরের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে। ICAI-র মতে, এই বিলটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে, যা সহজে বোঝা এবং কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করা যাবে।