উত্তপ্রদেশের পর এবার মহারাষ্ট্রেও লাভ জিহাদ সর্ম্পকিত আইন প্রণয়ন হতে চলেছে। ‘লাভ জিহাদ’ এবং ধর্মান্তরের জোরপূর্বক ঘটনা নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার শীঘ্রই আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই প্রস্তাবনা নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহারাষ্ট্র পুলিশের মহাপরিচালক সঞ্জয় ভার্মা। কমিটিতে নারী ও শিশু কল্যাণ, সংখ্যালঘু বিষয়ক, আইন ও বিচার, সামাজিক ন্যায়, বিশেষ সহায়তা, এবং গৃহ বিভাগ থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
শুক্রবার রাতে সরকারের জারি করা এক গেজেট নোটিশে বলা হয়েছে, এই কমিটি ‘লাভ জিহাদ’ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির আইনি পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা সুপারিশ করবে। কমিটি অন্যান্য রাজ্যে বিদ্যমান আইনগুলির বিশ্লেষণ করে, মহারাষ্ট্রে কিভাবে এসব বিষয় মোকাবিলা করা যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে।
লাভ জিহাদ বিতর্ক ও শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ড
‘লাভ জিহাদ’ বা হিন্দু মেয়েদের মুসলিম পুরুষদের দ্বারা ধর্মান্তরিত করার অভিযোগটি বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র সরকার বহুদিন ধরেই তুলে ধরেছে। এই বিতর্ক আরও বাড়ে যখন ২০২২ সালে শ্রদ্ধা ওয়াকার নামক এক যুবতীকে হত্যা করা হয় এবং তার লাশকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তার লিভ-ইন পার্টনার আফতাব পুণাওয়ালার দ্বারা। বিজেপির মতে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ‘লাভ জিহাদ’ একটি বড় কারণ ছিল। এবং এর প্রেক্ষিতেই আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
বিরোধী দলের সমালোচনা
মহারাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। জাতীয় কংগ্রেস পার্টির নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, “বিয়ে বা প্রেম একটি ব্যক্তিগত বিষয়, এটা সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয় নয়। সরকারকে দেশের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে কাজ করা উচিত, যেমন বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমস্যাগুলি।
সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমি বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “সরকার শুধুমাত্র মুসলিমদের হয়রানির জন্য কাজ করছে এবং সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে। তারা লিভ-ইন সম্পর্কের স্বাধীনতা দিতে চায়, কিন্তু যদি কেউ ১৮ বছরের ওপরে ধর্মান্তরিত হয় বা আন্তঃধর্মীয় বিয়ে করতে চায়, তখন তারা সমস্যা দেখায়। ‘লাভ জিহাদ’ বলে কিছু নেই।”
কংগ্রেস নেতা হুসেইন দলওয়াই অভিযোগ করেছেন যে, জোরপূর্বক ধর্মান্তর বা ‘লাভ জিহাদ’ একটি মিথ্যা ধারণা। তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্র প্রত্যেককে যে কোনো ধর্ম অনুসরণের স্বাধীনতা দেয়। আমাদের দেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, কিন্তু কিছু লোক চায় আমাদের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি ধ্বংস করতে। তারা দেখাতে পারবে কি, তাদের কাছে এমন কতগুলো ‘লাভ জিহাদ’ এর ঘটনা আছে?”
বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা
বিজেপির পক্ষ থেকে, বিধায়ক মঙ্গল লোধা সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, “‘লাভ জিহাদ’ এর ঘটনা দেশে বাড়ছে। আমরা দেখেছি শ্রদ্ধা ওয়াকারকে কিভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে অনেক এমন ঘটনা ঘটছে। যখন আমরা ‘লাভ জিহাদ’ বন্ধ করার চেষ্টা করি, তখন বিরোধীরা সেটি নিয়ে সমস্যা তুলে ধরে।”
মহারাষ্ট্র সরকার ‘লাভ জিহাদ’ এবং ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করলেও, বিরোধী দলগুলি এই পদক্ষেপকে সাম্প্রদায়িক এবং বিভাজনমূলক হিসেবে দেখে। সরকারের সিদ্ধান্ত আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক সংহতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।