আয়কর বিল নিয়ে কেন্দ্রের সিলেক্ট কমিটি, মুখোমুখি মহুয়া-নিশিকান্ত

আয়কর বিল পর্যালোচনার জন্য ৩১ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি গঠন করেছে সংসদের সচিবালয়। এই কমিটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের পাশাপাশি বিজেপির নিশিকান্ত দুবেও স্থান পেয়েছেন। অর্থাৎ,…

Central Select Committee on Income Tax Bill, Mahua-Nishikant Face-Off

আয়কর বিল পর্যালোচনার জন্য ৩১ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি গঠন করেছে সংসদের সচিবালয়। এই কমিটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের পাশাপাশি বিজেপির নিশিকান্ত দুবেও স্থান পেয়েছেন। অর্থাৎ, আয়কর সংক্রান্ত এই সিলেক্ট কমিটিতেও তাদের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে।  

গত বৃহস্পতিবার, লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ নতুন আয়কর বিল পেশ করেন। বিলটি পেশ হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় ও বিরোধী শিবিরের অন্যান্য নেতারা দাবি করেছেন, নতুন এই আয়কর বিলের মাধ্যমে কর ব্যবস্থাকে সরল করার কথা বলা হলেও, আসলে এই বিল কর ব্যবস্থাকে আরও জটিল করবে। 

   

বিরোধিতার মুখে, বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা না করে অর্থমন্ত্রী নিজেই সিলেক্ট কমিটি তৈরির প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী, ৩১ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মধ্যে ১৭ জন সদস্য এনডিএ শিবিরের, তার মধ্যে ১৪ জন বিজেপির সদস্য। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, শিব সেনা (ইউবিটি), এনসিপি এবং আরএসপি থেকে ১৪ জন বিরোধী সদস্যও এই কমিটিতে রয়েছেন। 

এই কমিটিতে মহুয়া মৈত্রের উপস্থিতি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তার বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে, ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার ঘটনায় মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল। নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ ছিল যে, মহুয়া মৈত্র ব্যবসায়ী বন্ধু দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে নগদ অর্থ এবং দামি উপহার নিয়ে সংসদের ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড দিয়েছেন। এই অভিযোগে মহুয়া মৈত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং তাঁর সাংসদ পদ বাতিল হয়। 

সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যানের পদে বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত জয় পান্ডাকে রাখা হয়েছে। এদিকে, কমিটিতে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রও থাকছেন, যা রাজনৈতিক বিতর্কের সুযোগ তৈরি করতে পারে। মহুয়া মৈত্র এবং নিশিকান্ত দুবের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন তো রয়েছেই। এর আগে একাধিকবার দুজনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশিত হয়েছে, এবং নতুন সরকার গঠনের পরও মহুয়াকে নিশিকান্ত দুবের ছায়া তাড়া করে গেছে।

বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই নতুন নয়। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বারবার  অভিযোগ তুলে নিশিকান্ত দুবে তাকে সংসদীয় কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।  এবার, একসঙ্গে কাজ করতে হবে একই কমিটিতে। এর ফলে, আয়কর বিল নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক চাপ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।  

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই সিলেক্ট কমিটির কাজ কতটা সহজ হবে? মহুয়া মৈত্র এবং নিশিকান্ত দুবে যে একে অপরকে বিরোধিতা করেন, তা পরিষ্কার। তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আসন্ন। 

এছাড়া, সিলেক্ট কমিটি তৈরি হওয়ার পরেই বিরোধী শিবিরের নেতারা বলেছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা সফল হবে কিনা তা সময়ই বলবে। রাজনৈতিক দিক থেকে এই কমিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা সরাসরি দেশের কর ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। 

আয়কর বিল নিয়ে এমন বিতর্ক অনেক কিছুই বলছে। তবে, এই বিতর্কের প্রভাব কেবল এই সিলেক্ট কমিটির কাজেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না, তা সময়ই দেখাবে।