১৭ বছর পর BSNL-এর মুনাফার সাফল্য, Q3-তে ২৬২ কোটি লাভ

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল (BSNL) ১৭ বছর পর ফের মুনাফায় ফিরেছে। ডিসেম্বর ২০২৪ ত্রৈমাসিক (Q3) রিপোর্ট অনুযায়ী, বিএসএনএল ২৬২ কোটি টাকা নেট মুনাফা অর্জন…

bsnl-profit-17-years-q3-262-crore-profit

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল (BSNL) ১৭ বছর পর ফের মুনাফায় ফিরেছে। ডিসেম্বর ২০২৪ ত্রৈমাসিক (Q3) রিপোর্ট অনুযায়ী, বিএসএনএল ২৬২ কোটি টাকা নেট মুনাফা অর্জন করেছে, যা টেলিকম সেক্টরের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া শুক্রবার এই মুনাফা ঘোষণা করেন, যা বিএসএনএল-এর জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই মুনাফার মাধ্যমে বিএসএনএল একটি দীর্ঘ সময় পর তার পরিসংখ্যানের অগ্রগতির প্রমাণ দিলো। মন্ত্রী সিন্ধিয়া জানান, ২০০৭ সালের পর এটি প্রথমবার বিএসএনএল কোনো ত্রৈমাসিক পরিসংখ্যানের মধ্যে মুনাফা ঘোষণা করেছে। বিএসএনএলের এই মুনাফা অর্জন সেক্টরের অন্যান্য বড় টেলিকম সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতার মধ্যে তাদের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

   

বিএসএনএল তার ব্যবসা বিস্তার এবং সেবার মান উন্নয়নে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদের মবিলিটি সেবার রাজস্ব ১৫ শতাংশ বেড়েছে, ফাইবার-টু-দ্য-হোম (FTTH) সেবার রাজস্ব ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লিজড লাইন সেবার রাজস্ব ১৪ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির মাধ্যমে বিএসএনএল তার গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, যেটি ডিসেম্বর ২০২৪-এ প্রায় ৯ কোটি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা জুন ২০২৪-এ ছিল ৮.৪ কোটি।

বিএসএনএল তার খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল তাদের অর্থ খরচ কমানো এবং সাধারণ খরচে নিয়ন্ত্রণ আনা, যার ফলে তারা গত বছরের তুলনায় ১,৮০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রক্রিয়া তাদের মুনাফা অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করতে বিএসএনএল নতুন কিছু সেবা চালু করেছে। যেমন, জাতীয় ওয়াই-ফাই রোমিং, বিআইটিভি – সকল মোবাইল গ্রাহকের জন্য বিনামূল্যে বিনোদন সেবা, এবং IFTV – সকল FTTH গ্রাহকের জন্য বিনামূল্যে টেলিভিশন সেবা। এছাড়াও, খনিজ খনির জন্য প্রথম বেসরকারি ৫জি সংযোগ চালু করা হয়েছে।

বিএসএনএল ৪জি সেবা সম্প্রসারণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বর্তমানে ১০০,০০০ টাওয়ারের মধ্যে প্রায় ৭৫,০০০ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৬০,০০০ টাওয়ার চালু করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, জুন ২০২৫ সালের মধ্যে বিএসএনএল তার সমস্ত ১০০,০০০ টাওয়ার চালু করতে সক্ষম হবে, যার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি কোণে ৪জি সেবা প্রদান সম্ভব হবে।

বিএসএনএল-এ এর EBITDA (অপারেটিং আয়) গত ৪ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, যা ১,১০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২,১০০ কোটি টাকা হয়েছে FY23-24 তে। এই ধরনের অগ্রগতির ফলে, বিএসএনএল-এর অবস্থান আগামীদিনে আরও শক্তিশালী হতে চলেছে। ৪জি সেবা পরিচালনা ছাড়াও, তাদের পরিকল্পনা রয়েছে সেবার ক্ষেত্রে আরও অনেক নতুন উদ্ভাবন আনতে, যা গ্রাহকদের জন্য আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে।

বিএসএনএল-এর ১৭ বছর পর মুনাফায় ফিরে আসা এই প্রাপ্তি টেলিকম সেক্টরের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার বর্তমান কর্মপরিকল্পনা ও উদ্ভাবনমূলক পদক্ষেপগুলো নিশ্চিতভাবেই সেক্টরের ভিতরে এবং বাইরের প্রতিযোগিতায় তাদের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করবে। ভারতের টেলিকম বাজারে বিএসএনএল-এর আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে আমরা এখন অপেক্ষা করতে পারি।