মার্কিন সেনাবাহিনীতে (US Army) রূপান্তরকামীদের যোগ দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দিন আগে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডারে সই করেছিলেন। এবার, ‘ইউএস আর্মি’ জানিয়ে দিল যে, ভবিষ্যতে আর কোনও রূপান্তরকামীকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে দেওয়া হবে না।
এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টে জানানো হয়েছে, ‘মার্কিন সেনাবাহিনী আর রূপান্তরকামীদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেবে না।’ এছাড়াও, ‘সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল, তা আর চলবে না।’ অর্থাৎ, যারা সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন, তাদের জন্যও লিঙ্গ পরিবর্তনের পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। এর মানে, চাকরিরত অবস্থায় লিঙ্গ পরিবর্তন করাও আর সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে, ট্রাম্প যখন প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হন, তখনই তিনি সামরিক ক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের সেনাবাহিনীতে (US Army) যোগ দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তবে, ২০২১ সালে, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প মসনদে ফিরে আসার পর, তিনি আবারও সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছেন।
এলন মাস্কের মেয়ে ভিভিয়ান জেন্না উইলসন একজন রূপান্তরকামী। তিনি নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ট্রাম্পের শাসনে রূপান্তরকামীদের উপর বড় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। তার আশঙ্কা সত্যি হয়েছে, কারণ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা ফের চালু করেছেন।
বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ১৩ লক্ষ কর্মী আছেন। এর মধ্যে রূপান্তরকামী কর্মী সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০। তবে, কিছু সূত্র অনুযায়ী এই সংখ্যা ১,০০০’র নিচেও হতে পারে। এই নতুন নিষেধাজ্ঞার পর, রূপান্তরকামীদের সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় চাকরি হারানোর কোনো নির্দেশনা এখনও দেওয়া হয়নি। প্রতিরক্ষা সচিব জানিয়েছেন, যারা কর্মরত রূপান্তরকামী সেনা সদস্যরা আছেন, তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না।
এর আগে, মেয়েদের খেলায় রূপান্তরকামী অ্যাথলিটদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, ট্রাম্প ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সের আগে রূপান্তরকামীদের মহিলাদের খেলা থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে চাপও দিচ্ছেন।
মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব শুধু সেনাবাহিনীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। রূপান্তরকামীদের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য সরকারি পরিষেবাও প্রভাবিত করতে পারে। যদিও কিছু অংশে এখনও রূপান্তরকামীদের অধিকার সংরক্ষিত, তবে ট্রাম্পের নতুন শাসন মেনে, সামরিক এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রের বাইরে তাঁদের পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে।
এদিকে, মার্কিন জনগণের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন এবং বলছেন, এটি রূপান্তরকামীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা দাবি করছেন, রূপান্তরকামীদের জন্য কোনো প্রকার বৈষম্য না ঘটিয়ে তাদের সমান সুযোগ দেওয়া উচিত।
এখন প্রশ্ন উঠছে, রূপান্তরকামীদের জন্য এই নতুন নিষেধাজ্ঞা কেমন প্রভাব ফেলবে? ভবিষ্যতে, রূপান্তরকামীদের জন্য সরকারের আরও কঠোর নীতি আনবে কি না? সারা বিশ্বে রূপান্তরকামীদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষত, যখন ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তখন রূপান্তরকামীদের জন্য আরও কঠিন সময় আসতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।