কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো গাড়ির মেয়াদ বাড়াতে কর দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি, ২০ বছর বয়সের পরের গাড়ির জন্য ‘সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস’ (সিএফ) কর তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এই খসড়া প্রস্তাব গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় এবং এর ফলে পরিবহণ ব্যবসায়ীরা গভীর চিন্তায় পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা, এই কর বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি বাসমালিকদের ওপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি হবে, যা অনেকেই সামলাতে পারবেন না।
বর্তমানে, ১৫-২০ বছরের পুরনো গাড়ির জন্য সিএফ কর বাবদ খরচ ১৮ হাজার টাকা হলেও, ২০ বছরের বেশি বয়সী গাড়ির ক্ষেত্রে তা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার টাকায়। এই প্রস্তাবটি যদি কার্যকর হয়, তবে বিশেষত বেসরকারি বাসমালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে ইতিমধ্যে প্রচুর খরচ হয়, আর কর দ্বিগুণ হলে এটি আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, এতে তারা পুরনো বাস চালানোর পরিবর্তে নতুন বাস কেনার দিকে ঝুঁকবেন, যা সরকারের উদ্দেশ্য হতে পারে— পুরনো গাড়িগুলিকে আস্তে আস্তে বাতিল করা।
এছাড়া, শহর কলকাতা ও দিল্লিতে পরিবেশ দূষণ নিয়ে আদালতের নির্দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলে ১৫ বা ২০ বছরের পুরনো গাড়ি রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের শংসাপত্র নিয়ে চালানো যায়। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রস্তাবের ফলে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সন্দেহ এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, কারণ তারা মনে করছেন এটি সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের ‘গোপন পরিকল্পনা’ হতে পারে, যার উদ্দেশ্য পুরনো গাড়িগুলিকে বাতিল করা।
তবে, এমন কর বৃদ্ধি শুধুমাত্র বেসরকারি বাসমালিকদের জন্য নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে, করোনাকালে লকডাউনের ফলে পরিবহণ শিল্প বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, এবং সেই অবস্থায় যদি এই নতুন কর কাঠামো কার্যকর হয়, তবে তা আরও বিপদের সৃষ্টি করবে। এতে বেসরকারি বাস পরিষেবা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং জনগণের জন্য পরিবহণ পরিষেবা আরও অপ্রাপ্য হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ ব্যবসায়ীরা একমত, যে কর বৃদ্ধির জায়গায় গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সুরক্ষা বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তবে সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খরচ যেন না বাড়ানো হয়। বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির নেতা রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “কেন্দ্রের প্রস্তাবের ফলে শুধু পুরনো বাসের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বরং নতুন বাসও রাস্তায় নামবে না। এতে সরকারের পক্ষ থেকেও সমস্যা তৈরি হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা আরও বাড়বে।”
রাজ্য পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল জানিয়েছেন, তারা খসড়া প্রস্তাবটি ভালভাবে খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। তবে, এখনও এটি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তাই শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি।
পরিবহণ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তাহলে তার প্রভাব শুধু পরিবহণ শিল্পের ওপরই পড়বে না, বরং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপরও এর খারাপ প্রভাব পড়বে।