মাধ্যমিক পরীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার। গত এক দশক ধরে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বর্তমানে ‘নিউ নর্মাল’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৮২ জন এবং ছাত্রী ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯০৮ জন, যা এই পরিবর্তনের স্বাক্ষর। কিন্তু কেন ছাত্রের সংখ্যা কমছে? কেন ছাত্রীরা বাড়ছে?
একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে, বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলোতে ছেলেরা একদিকে যেমন শ্রমিকের কাজে চলে যাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পড়াশোনায় আগ্রহী নয়। বহু ছাত্র বিভিন্ন কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে এবং কর্মজীবনে যুক্ত হয়ে গেছে। এমনকি, কোভিডের পর, বহু পরিবার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে, যা ছাত্রদের পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত করেছে।
অন্যদিকে, ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রভাব। বিশেষ করে, ‘কন্যাশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘সবুজসাথী’ এবং ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পগুলি ছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এসব প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার কারণে অনেক মেয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হয়েছে। এছাড়া, ‘মিড ডে মিল’ এবং অন্যান্য সরকারি উদ্যোগের ফলে ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছে।
এছাড়া, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তার বক্তব্যে একাধিক কারণ তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘সবুজসাথী’ প্রকল্পের কার্যকরিতা অন্যতম। তাঁর মতে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ছাত্রীদের শিক্ষায় উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ্যের পাবলিক স্কুল নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে, মেয়েরা নিকটবর্তী স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে, যা তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
সামাজিক এবং আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মেয়েদের জন্য কিছু পরিবর্তন এসেছে। মায়েরা এখন পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, এবং তাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা বেড়েছে, যার ফলে মেয়েরা পড়াশোনা এবং কর্মজীবনে মনোযোগী হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়া, শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, ছেলেরা পড়াশোনা ছেড়ে কাজে চলে যাচ্ছে, যার ফলে ছাত্রদের সংখ্যা কমছে। অন্যদিকে, সরকারের বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্প এবং মেয়েদের প্রতি পরিবারগুলির মনোভাবের পরিবর্তনের কারণে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিবর্তনগুলো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে এবং আগামী বছরগুলোতে এই ধারা আরও দৃঢ় হতে পারে।
তবে, কিছু সমালোচক মনে করছেন, গ্রামাঞ্চলে ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা যদি এভাবে বাড়ে, তবে তা দেশের ভবিষ্যত শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ছাত্রীর সংখ্যা বাড়া একটি স্বস্তির বিষয় এবং এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটাচ্ছে।
এখন, এই পরিস্থিতির প্রতি সরকারের মনোযোগ আরও বাড়ানো উচিত, যেন ছাত্রদেরও আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়, এবং দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুক।