বিহার-উত্তরপ্রদেশে জওয়ান নিয়োগে জালিয়াতি! ৫ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চিঠি সিবিআইয়ের

কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগে (Recruitment Scam) তদন্তে নেমেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (CBI)। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ভুয়ো নথির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আধা…

CBI Investigates Recruitment Scam in Bihar-Uttar Pradesh Central Forces

কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগে (Recruitment Scam) তদন্তে নেমেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (CBI)। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ভুয়ো নথির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি পাওয়ার চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর পাঁচটি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআই। এই বাহিনীগুলি হলো— ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশ (ITBP), বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF), সশস্ত্র সীমা বল (SSB), সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (CISF) এবং অসম রাইফেলস।

সিবিআই-এর অভিযোগ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বহু চাকরি প্রার্থী উত্তর ২৪ পরগনার ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে এই কেন্দ্রীয় বাহিনীগুলিতে চাকরি পেয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, নিয়োগের জন্য দাখিল করা নথিগুলোর অনেকগুলিই জাল। সিবিআই ইতিমধ্যেই এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকা বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে এবং তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে।

   

কীভাবে ফাঁস হলো এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি?
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের কিছু ব্যক্তি ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক ভবন থেকে ভুয়ো ঠিকানার ভিত্তিতে ডমিসাইল সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। এরপর সেই সার্টিফিকেট ব্যবহার করেই কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন।

এই চক্রের মূল পান্ডা হিসাবে ধরা পড়েছে সেনাকর্মী মহেশ চৌধুরী। সিবিআই তাকে জেরা করে ইতিমধ্যেই ৩০ জন ভুয়ো নিয়োগপ্রাপ্তকে শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং শীঘ্রই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

ব্যারাকপুর প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে
সিবিআই এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, অনলাইনে জমা পড়া নথিগুলো দেখে সেগুলি সন্দেহজনক বলে মনে হয়নি, তাই যথারীতি ডমিসাইল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য নথি প্রদান করা হয়েছিল। তবে সিবিআই-এর দাবি, এই নিয়োগ চক্রের পিছনে বড়সড় দুর্নীতির ইঙ্গিত রয়েছে এবং প্রশাসনের একাংশের মদত ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসার পর কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিভিন্ন রাজ্যের প্রার্থীদের নথি যাচাই করা হয় কি না, নিয়োগের আগে যথাযথ তদন্ত করা হয় কি না—এসব নিয়েই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, ভুয়ো ঠিকানা ও জাল নথির মাধ্যমে কীভাবে এত সংখ্যক ব্যক্তি নিয়োগ পেলেন, তা নিয়ে গভীর তদন্তের দাবি উঠছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
সিবিআই এখন সমস্ত সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং ভুয়ো নথি দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আরও অনেককে সমন পাঠানো হতে পারে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে কয়েকজন অফিসারকেও নজরে রাখা হয়েছে। যদি প্রমাণ মেলে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

সিবিআই-এর তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। আগামী দিনে এই তদন্তে আরও বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে কারা কারা যুক্ত, কতজন চাকরি পেয়েছেন, এবং কীভাবে এই চক্র এতদিন ধরে সক্রিয় ছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সিবিআই।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বাহিনীগুলির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার কী পরিণতি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।