‘ইউএপিএ’ আইনে কাশ্মীরে জঙ্গি সমর্থকদের স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir Police) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাল পুলিশ৷ কুলগাম পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা এক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, যা সন্ত্রাসবাদীদের…

Jammu & Kashmir Police Seizes Property of Terrorist Supporters Under UAPA in Kulgam

জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir Police) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাল পুলিশ৷ কুলগাম পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা এক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, যা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় ও বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এটি ১৯৬৭ সালের বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (UAPA) এর ২৫ ধারা অনুযায়ী একটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এটি ছিল একটি দুই তলা আবাসিক বাড়ি।

এই অভিযানে কুলগাম পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল জানিয়েছে যে, এই সম্পত্তি কুলগামের মদরগাম এলাকার বাসিন্দা আলি মোহাম্মদ দারের ছেলে সফদার আলি দারের নামে নিবন্ধিত। পুলিশ জানিয়েছে যে এই সম্পত্তি ব্যবহার করা হয়েছিল সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে, যেখানে তারা বসবাস করতো এবং তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তাও সরবরাহ করা হতো।

   

পুলিশের মুখপাত্র আরো বলেন, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য কুলগাম থানার মামলা FIR No. 100/2024 এর আওতায় এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমটি পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়া মেনে, পুলিশ দল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন এই সম্পত্তিটি সরকারি অধিকারাধীন এবং কোনো ধরনের হস্তান্তর, লিজ, বিক্রি বা পরিবর্তন শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া করা যাবে না।

১৯৬৭ সালে প্রণীত বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই আইনের আওতায়, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। কুলগাম পুলিশ এই আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ এবং আশাবাদ তৈরি করেছে। পুলিশের মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইকে আরো শক্তিশালী করবে।

কুলগাম পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘এই ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের লক্ষ্য হল সন্ত্রাসবাদী শক্তির নেটওয়ার্ককে নির্মূল করা। আমাদের অভিযান চলবে, এবং যেসব ব্যক্তিরা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়, সহায়তা বা সমর্থন দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপ কুলগাম এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’’

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চলছে। কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সমর্থন বা সহায়তা দেওয়া একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের থেকে অঞ্চলের জনগণকে মুক্ত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারের মতে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পিছনে যারা অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে সন্ত্রাসবাদীরা তাদের নেটওয়ার্ক স্থাপন ও বিস্তার করতে না পারে।

এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে, সরকার সন্ত্রাসবাদীদের জনসমাজের মধ্যে সহজে স্থান দখল করতে এবং তাদের অস্ত্রের খুঁটি হিসেবে মানুষের সম্পত্তি ব্যবহার করতে বাধা দিতে চায়। সন্ত্রাসবাদীদের অর্থায়ন বা সমর্থন প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল, যা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে একেবারে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে সহায়ক হবে।

কুলগাম পুলিশ জানিয়েছে যে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সময় তারা সব আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে এবং সম্পত্তি মালিকের অধিকার রক্ষা করার জন্য সমস্ত বিধিনিষেধ নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের কাছে এটি একটি বড় প্রমাণ যে আইন সবার জন্য সমান এবং যে কেউ আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন, তাদের মতে এটি জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানতে পারে।

এদিকে, সাধারণ জনগণ এই পদক্ষেপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেকেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে হলেও কিছু অংশ মনে করছেন, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে টার্গেট করা হচ্ছে। তবে, পুলিশ এবং প্রশাসন এই ধরনের অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র আইন অনুসরণ করছে এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

কুলগাম পুলিশ তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দাতা এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

একই সঙ্গে, কুলগাম পুলিশ জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদীদের সহযোগিতা না করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সমন্বয় রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হয়।

এছাড়া, কুলগাম পুলিশ সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে আরও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তদন্ত করবে এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিবে।

এটি স্পষ্ট যে, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং কুলগাম পুলিশ এই ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। আইনি পদক্ষেপ, সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, এবং সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযান থেকে জনগণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আস্থা তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা ও জনগণের শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।