পাকিস্তানি সেনা গত বুধবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার বালাকোট এলাকায় লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানের সেনারা একের পর এক অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভারী গুলি চালায়, যা যুদ্ধবিরতি একমাত্র বড় ধরনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি গত চার বছরে প্রথম বড় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানি বাহিনী ১৫টিরও বেশি রাউন্ড ফায়ারিং করেছে।
পাকিস্তানের একপেশে গুলি চালানো শুরু হলে ভারতীয় সেনা তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা আক্রমণ করে। এ ব্যাপারে প্রথম প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে পাকিস্তানী বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানি বাহিনীর উক্ত আক্রমণের মাধ্যমে ভারতীয় সেনা এটি অনুমান করছে যে, পাকিস্তান সম্ভবত এই আক্রমণের মাধ্যমে একটি নতুন জঙ্গি অনুপ্রবেশের পথ পরিষ্কার করতে চাইছে, যেটি সামনের গরমের মরসুমে ঘটতে পারে। ভারতীয় সেনা তাদের সীমানা রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত এবং এই প্রকারের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুততার কথা নিশ্চিত করেছে।
পুঞ্চের LoC-এ পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের পরপরই একটি দুর্ঘটনাও ঘটে। বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনার এক জওয়ান মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। জওয়ানটি ভারতীয় সেনার জুনিয়র কমিশন অফিসার (JCO) ছিলেন এবং পুঞ্চ সেক্টরে লাইন অফ কন্ট্রোলের উপর একটি টহল দল নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি মাইন বিস্ফোরণে আহত হন যখন তিনি একটি মাইন এলাকায় পা দেন। আহত জওয়ানকে দ্রুত উদ্ধার করে সেনা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই মাইন বিস্ফোরণটি জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ LoC এলাকায় এরকম ঘটনা নতুন নয় এবং এর সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার পাকিস্তানি জঙ্গিদের তৈরি একটি আইইডি বিস্ফোরণের কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের আখনোড় সেক্টরে দুই সেনা নিহত হন। এই বিস্ফোরণে সেনার ক্যাপ্টেনসহ দুই জওয়ান প্রাণ হারান এবং আরেকজন গুরুতর আহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিস্ফোরণটি পাকিস্তানি জঙ্গিদের দ্বারা পেতে রাখা আইইডি ছিল, যা তাদের সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় সহায়তা করে। নিহত সেনাদের মধ্যে একজন সেনা ক্যাপ্টেন ছিলেন এবং আহত জওয়ানটি এখনও চিকিৎসাধীন।
পাকিস্তানী বাহিনীর লঙ্ঘন এবং ভারতীয় সেনার পাল্টা আক্রমণ মিলে পুঞ্চ সেক্টরের পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান ও ভারত উভয় পক্ষই এই এলাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং কোনও সময়ই সংঘর্ষ হতে পারে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে, পুঞ্চ সেক্টরের একটি মাইন বিস্ফোরণে একজন সেনা নিহত হন, যার পরে অঞ্চলটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ভারতীয় সেনা এই পরিস্থিতিতে তাদের প্রস্তুতির স্তর আরও বাড়িয়েছে এবং লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর তাদের নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করেছে। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে যে, তারা পাকিস্তানের কোনো ধরনের অযাচিত আগ্রাসন বা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তারা তাদের কর্তব্য পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের পর, ভারতীয় সেনার পাল্টা আক্রমণ কেবল একদিকে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করেছে, বরং এটি পাকিস্তানি সেনার উপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সামরিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে যে পাকিস্তানি বাহিনীর একাধিক সদস্য নিহত বা আহত হয়েছে।
পাকিস্তান এবং ভারত উভয়ই তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকে এবং সবসময় প্রস্তুত থাকে। পুঞ্চ সেক্টরে সাম্প্রতিক সময়ের উত্তেজনা এবং সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত তাৎক্ষণিক এবং শক্তিশালী ছিল, যা ভারতের সামরিক প্রস্তুতির একটি বড় চিহ্ন। তবে এই পরিস্থিতি আরও বিকৃত হতে পারে এবং ভারতীয় সেনা তাদের সীমান্তরক্ষা কাজে আরও তৎপর হয়ে উঠবে।