মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় দফা মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে গ্রামীণ এলাকায় কর্মরত আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করেছেন রাজ্য সরকার। এবারের বাজেটে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে পরিচিত আশা কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য স্মার্টফোন দেওয়ার ঘোষণা করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্য সরকার এ জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা গ্রামীণ এলাকাগুলির এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের কাজের জন্য বড় ধরনের সুবিধা এনে দেবে।
রাজ্যের প্রায় ৭০ হাজার আশা কর্মী এবং লক্ষাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে, যাতে তারা সরকারি অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এটি তাদের কাজের উন্নতিতে সাহায্য করবে, বিশেষত মা ও শিশু স্বাস্থ্য, ডেঙ্গু, যক্ষ্মা, ক্যানসার, মধুমেহ, রক্তচাপ সহ নানা রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রমে।
এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হল, এই কর্মীরা যাতে সরকারের নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন এবং আরও ভালোভাবে তাদের কাজ করতে পারেন। অনেক সময়েই দেখা যায়, কর্মীদের কাছে স্মার্টফোন না থাকার কারণে কাজের সুবিধা পাওয়া যায় না। তাদের কাছে যে মোবাইল ফোন থাকে, তা অনেক সময় কাজের জন্য উপযুক্ত নয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে সরকারি মোবাইল প্রয়োজন হয়।
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে আনন্দিত অনেক আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। হুগলির আশাকর্মী মিতা সাহা এবং পিয়ালী দাসসহ অন্যান্য কর্মীরা জানিয়েছেন, “অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে ফোন হ্যাং করে যায় এবং অ্যাপ ডাউনলোড করা যায় না। সরকারি মোবাইল পেলে আমাদের কাজের সুবিধা হত। বাড়িতে একটাই ফোন থাকে এবং কখনও কখনও আমাদের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে পড়াশোনা করে। তখন আমরা ফোন নিয়ে বেরোতে পারি না। স্মার্টফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই সহায়ক হবে।”
তবে, এই ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধও শুরু হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের অংশ হিসেবে দাবি করেছেন। সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এটা ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয়। এই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা। দেশের অন্যান্য রাজ্যে অনেক আগেই আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মোবাইল পেয়েছেন। তাহলে, পশ্চিমবঙ্গে কেন তারা পাচ্ছিলেন না?”
তবে, রাজ্যের এ ঘোষণায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। স্মার্টফোন পাওয়ার মাধ্যমে তাদের কাজের গতি বাড়বে এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজে পৌঁছাতে পারবে।
এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষ থেকে বড় একটি পদক্ষেপ, যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণের কল্যাণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকার এই ধরনের জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়