মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Chief Minister of West Bengal) নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট বুধবার পেশ করা হল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর(Mamata Banerjee) উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী( Finance Minister of west bengal) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বাজেট রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও জনমুখী পদক্ষেপের দিকে নজর দিয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি মেটানোও ছিল এই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য।
বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে। এর মধ্যে পথশ্রী প্রকল্পের জন্য আরও ১,৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গঙ্গাসাগর সেতুর জন্য ৫০০ কোটি টাকা এবং ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবর্ষে আরও ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে, এর জন্য ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এর ফলে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট পেশের ঠিক আগে বিধানসভার স্পিকার বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Chief Minister of West Bengal) পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী–বিধায়করা। এছাড়া আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে, এবারও বিজেপির কোনো বিধায়ক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই ধরনের বৈঠকে বিরোধীদের উপস্থিত থাকা উচিত।” পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিরোধীদের না অংশ নেওয়ার কারণ সরকার।”
বাজেট (WB Budget 2025) পেশের সময় কেন্দ্র–রাজ্য মহার্ঘভাতা বা ডিএ নিয়ে বিরোধী দলগুলি ওয়াকআউট করে এবং হট্টগোল শুরু করে। বিজেপি বিধায়করা কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে রাজ্য সরকার তাদের বকেয়া টাকা মেটানোর পাশাপাশি আবাসনের জন্য বাকি টাকা সরবরাহ করেছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে এবং রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে আরও ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা করেছে।
রাজ্য সরকারের মাথার ওপর ৭ লক্ষ কোটি টাকার দেনা রয়েছে এবং উচ্চ সুদের কারণে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। তবুও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমজনতার উপর চাপ না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাজেটে অন্যান্য বরাদ্দগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৬,৫৯৩.৫৮ কোটি টাকা এবং স্কুলশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪১,১৫৩.৭৯ কোটি টাকা। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘভাতা বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়েছে। ৪% মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি হবে এবং এটি ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে, ফলে রাজ্য সরকারি কর্মীরা মোট ১৮% মহার্ঘভাতা পাবেন। এছাড়া, আশাকর্মীদের জন্য স্মার্টফোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে।
রাজ্য সরকার নারী ও শিশু কল্যাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। পথশ্রী প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিজ বিপণন বিভাগের জন্যও ৮২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং আগামী দু’বছরের মধ্যে এটি কার্যকর হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বাজেট রাজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এবং জনগণের জন্য আরও উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করবে।