ভারতের আয়কর আইন, ১৯৬১-র স্থলে নতুন আয়কর বিল, ২০২৫ সংসদে পেশ হতে চলেছে। এই নতুন আইনকে আরও সহজ, স্বচ্ছ ও আধুনিক করার লক্ষ্যেই এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন বিলে মোট ৫৩৬টি ধারা, ২৩টি অধ্যায় এবং ১৬টি সূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে মোট ৬২২ পৃষ্ঠার বিধান থাকছে, যা বিদ্যমান আয়কর আইনের তুলনায় অনেকটাই সংক্ষিপ্ত।
নতুন আয়কর বিলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলির মধ্যে অন্যতম হল— ‘পূর্ববর্তী বছর’ শব্দের পরিবর্তে ‘কর বর্ষ’ শব্দের ব্যবহার। এছাড়াও, ‘মূল্যায়ন বর্ষ’ ধারণাটিও বাতিল করা হয়েছে।
বর্তমানে, একজন করদাতার আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রে দুটি বছর ব্যবহৃত হয়— আয় উপার্জনের বছরটিকে ‘পূর্ববর্তী বছর’ বলা হয়, এবং এর পরের বছরটিকে ‘মূল্যায়ন বর্ষ’, যখন সেই আয়ের ওপর কর পরিশোধ করা হয়। নতুন আয়কর বিলে এই জটিলতা দূর করে কেবল ‘কর বর্ষ’ ধারণা চালু করা হয়েছে, যা কর ব্যবস্থা আরও সহজ করবে।
নতুন আয়কর আইনে ধারা বা সেকশন সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৩৬টি করা হয়েছে, যা আগের ২৯৮টির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে, আইনকে আরও সুসংহত করার জন্য এতে ১৬টি সূচি যোগ করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ১৪টি সূচির তুলনায় বেশি। অধ্যায়ের সংখ্যা একই রাখা হয়েছে— ২৩টি।
এছাড়া, নতুন আইনটি ৬০ বছরের বিচারিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করে, ফলে আয়কর সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা ও দ্বন্দ্ব কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, স্টক অপশন (ESOPs)-এর কর ব্যবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার বিধান রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি বা কর-সংক্রান্ত বিতর্ক না থাকে।
নতুন আয়কর আইনে কর ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ এবং গতিশীল করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষত, কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (CBDT)-কে আরও ক্ষমতাশালী করা হয়েছে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কর-সংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন করতে পারে।
আগে আয়কর দফতরকে বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত বিষয়ের জন্য সংসদের অনুমোদন নিতে হতো। কিন্তু নতুন বিলে CBDT-কে কর প্রশাসন, অনলাইন কর পরিশোধ ব্যবস্থা, ডিজিটাল নজরদারি ও অন্যান্য সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে (ধারা ৫৩৩ অনুযায়ী)। এর ফলে আয়কর ব্যবস্থাপনার গতি বাড়বে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক বিলম্ব কমে আসবে।
যদিও নতুন আইনের ধারা সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এর মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা মাত্র ৬২২, যা পূর্ববর্তী আইনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ১৯৬১ সালে যখন বর্তমান আয়কর আইন প্রণীত হয়, তখন সেটি ছিল ৮৮০ পৃষ্ঠার। কিন্তু পরবর্তী ৬০ বছরে একাধিক সংশোধনী ও সংযোজনের ফলে এটি আরও জটিল হয়ে উঠেছিল। নতুন আইনের লক্ষ্য কর ব্যবস্থা সহজতর করা এবং করদাতাদের জন্য আরও স্বচ্ছতা আনা।
নতুন আয়কর বিলটি প্রথমে লোকসভায় উপস্থাপিত হবে এবং তারপর এটি সংসদের স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হবে, যেখানে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হবে। সংসদীয় অনুমোদনের পর এটি আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ঘোষণা করেছিলেন যে, নতুন আয়কর বিল সংসদের চলতি অধিবেশনেই উত্থাপিত হবে। এই লক্ষ্যে CBDT একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করেছে, যার কাজ হলো আইনটিকে সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য এবং নির্দিষ্ট করা, যাতে করদাতারা কম বিভ্রান্ত হন এবং কর বিতর্ক কমে আসে।
এই পর্যালোচনার জন্য ২২টি বিশেষজ্ঞ উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেছে। সরকার করদাতাদের কাছ থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করেছে। মোট ৬,৫০০টি প্রস্তাব পেয়েছে আয়কর বিভাগ, যা আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নতুন আয়কর বিল, ২০২৫ ভারতীয় কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, ডিজিটাল ও গতিশীল করবে। আয়কর পরিশোধের জটিলতা কমিয়ে, আইনি ভাষা সহজ করে এবং প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি করে এটি করদাতাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এই নতুন আইন সংসদীয় অনুমোদনের পর কবে কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।