পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা ব্যানার্জি ও রেয়াত হোসেন সরকারকে ৪৪ কোটি টাকা মানহানি নোটিশ পাঠিয়েছেন। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপটি দেশের রাজনীতিতে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ কোনও রাজ্যপাল এভাবে শাসক দলের বিধায়কদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেননি কখনো।
এই বিতর্কের শুরু হয় সায়ন্তিকা ব্যানার্জি ও রেয়াত হোসেন সরকারকে তাদের শপথ গ্রহণ নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে যে, তাদের শপথ গ্রহণ আইনগতভাবে অবৈধ ছিল এবং তা পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে একটি ধর্না বা অবস্থান ধর্মঘট (dharna) অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যপাল সি. ভি. আনন্দ বোস দাবি করেছেন যে, বিধায়করা শপথ গ্রহণের জন্য সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি এবং রাজ্য বিধানসভার উপ-স্পীকারের নির্দেশে শপথ নেননি। তারা স্পীকারের হাতে শপথ গ্রহণ করেন, যা সংবিধান বিরোধী এবং রাজ্যপাল ও অন্যান্য সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল সি. ভি. আনন্দ বোসের দাবি, সায়ন্তিকা ব্যানার্জি এবং রেয়াত হোসেন সরকারের শপথ গ্রহণে আইনগত বৈধতা ছিল না। তিনি বলেন, তারা উপ-স্পীকারের নির্দেশনা অমান্য করে স্পীকারের হাতে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, যা সংবিধান এবং বিধানসভা কার্যপদ্ধতির বিরুদ্ধে। রাজ্যপাল মনে করেন, এই পদক্ষেপটি শুধু সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর একটি ষড়যন্ত্র। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এটি তাঁর সম্মানকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং এর ফলস্বরূপ তিনি তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়াও, রাজ্যপালের দাবি, এই শপথ গ্রহণের সময় যে আন্দোলন বা অবস্থান ধর্মঘট (dharmana) সংগঠিত হয়েছিল, তা একজন রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর মর্যাদাকে আঘাত করেছে এবং এটি দেশের সংবিধানিক ব্যবস্থা এবং রাজ্যপালের পদকে অসম্মানিত করেছে। সেই কারণে, রাজ্যপাল প্রাথমিকভাবে ৪৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবী করেছেন।
রাজ্যপাল সি. ভি. আনন্দ বোস তৃণমূল কংগ্রেসের এই দুই বিধায়ক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোট ৪৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং দুই বিধায়কের এই অবৈধ কার্যকলাপের কারণে তার ব্যক্তিগত সম্মান এবং রাজ্যপাল হিসেবে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এর মধ্যে সায়ন্তিকা ব্যানার্জি ও রেয়াত হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ২২ কোটি টাকা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ২২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করা হয়েছে।
এছাড়া, রাজ্যপাল এই দাবি করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে যে ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে, তা দেশের সর্বোচ্চ শাসক সংস্থার প্রতি অসম্মান এবং এটি রাজ্যপালের চেয়েও আরও গুরুতর কিছু। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেমনি এটি রাজ্য সরকারের ও রাজ্যপালের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়াবে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন যে রাজ্যপাল রাজনীতি করছেন এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চাইছেন। তারা বলেছেন, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ রাজনীতির বাইরে এবং এটি একেবারে অপ্রত্যাশিত। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যপাল অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছেন, যা রাজ্যের শান্তি এবং উন্নয়নকে ব্যাহত করতে পারে।
এই ঘটনাটি রাজ্য রাজনীতিতে এক বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল, তবে এবারের এই মানহানি মামলা তা আরও তীব্র করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজ্যপাল এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের প্রতি একটি কঠোর বার্তা দিতে চেয়েছেন, যা আগামী দিনে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।
এই বিতর্ক রাজ্যপাল এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্রে একটি নতুন মোড় নিতে পারে।