ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের UGC-CARE (UGC Consortium for Academic and Research Ethics) জার্নালের তালিকা আর ব্যবহার করবে না। এই তালিকাটি গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি গবেষণা উন্নতি, শিক্ষক পদোন্নতি এবং গবেষণা তহবিলের জন্য জার্নাল নির্বাচন নির্ধারণে ব্যবহৃত হত। তবে ইউজিসি বলেছে যে তালিকাটি খুবই ব্যক্তিগত, স্বচ্ছতা অভাবিত এবং গবেষকদের মধ্যে অনেক অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে ইউজিসি একটি নতুন নির্দেশিকা প্রবর্তন করেছে। যার মাধ্যমে শিক্ষক এবং ছাত্রদের ভাল পিয়ার-রিভিউড জার্নাল চয়নের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে। নতুন এই নির্দেশিকার উপর মতামত জানাতে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসি কেয়ার তালিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষকদের মধ্যে অভিযোগ ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন যে এই তালিকাটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং ধীর গতিতে কাজ করে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কিছু জার্নালকে অনুপযুক্ত হিসেবে দেখা হয়েছিল এবং এটি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত জার্নালগুলি যথেষ্ট অন্তর্ভুক্ত করে না। আরও গুরুতর বিষয় হলো, যখন জার্নালগুলি হঠাৎ তালিকা থেকে বাদ পড়তো, তখন গবেষকদের কাছে এটি একটি বড় ধাক্কা ছিল, যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি হত। বিশেষ করে গবেষকদের ওপর চাপ ছিল শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত জার্নালে প্রকাশ করতে।
নতুন নীতির প্রবর্তন এবং বিকেন্দ্রীকৃত মূল্যায়ন ব্যবস্থা
এই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, ইউজিসি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে এবং তালিকাটির প্রভাব পর্যালোচনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়। কমিটির প্রতিবেদনে বেশ কিছু বড় সমস্যা উঠে আসে, বিশেষত যখন বিষয়গুলো নন-স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) ক্ষেত্রে সম্পর্কিত ছিল। কমিটি জানায় যে, ইউজিসি মডেলটি জার্নাল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল।
ইউজিসি এর চেয়ারম্যান মামিদালা জগদীশ কুমার জানিয়েছেন, “ইউজিসি কেয়ার তালিকার পদ্ধতি জার্নাল মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ ছিল। বিশেষত নন-স্টেম ক্ষেত্রের জন্য। এটি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তালিকাভুক্ত প্রকাশনার বৈধতা।” তাই তালিকা বাতিল করে এবং বিকেন্দ্রীকৃত মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য নতুন সিস্টেম
নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নিজস্ব জার্নাল নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য উত্সাহিত করা হবে। ইউজিসি বলেছে, এই নতুন পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের শিক্ষাগত প্রয়োজনের ভিত্তিতে উপযুক্ত জার্নাল বেছে নিতে পারবে। এই সিস্টেমটি বিভিন্ন বিষয় ও নতুন ক্ষেত্রের গবেষণার জন্য আরও নমনীয়তা সৃষ্টি করবে। এর ফলে শিক্ষাবিদরা তাদের নিজস্ব সুবিধা অনুযায়ী গবেষণা পত্রিকা নির্বাচন করতে পারবেন এবং গবেষণার স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে।
তবে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে পর্যাপ্ত সিস্টেম না থাকে, তবে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের বা প্রতারণামূলক জার্নালে গবেষণা প্রকাশে সহায়তা করতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতে ইউজিসি পরামর্শ দিয়েছে যে অভিজ্ঞ অধ্যাপকরা নবীন গবেষকদের উপযুক্ত জার্নাল বাছাইয়ের জন্য সহায়তা করুন, বিশেষ করে প্রতারণামূলক প্রকাশকদের থেকে সতর্ক থাকার জন্য।
নতুন নির্দেশিকা এবং স্বচ্ছতা
নতুন নির্দেশিকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শক্তিশালী জার্নাল মূল্যায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে এবং উচ্চমানের প্রকাশনার মান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। ইউজিসি আশা করছে, পুরনো তালিকাটি বাদ দেওয়ার মাধ্যমে আরও স্বচ্ছ, নমনীয় এবং বৈচিত্র্যময় একটি ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব হবে, যা আজকের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা ও বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত করবে।
এভাবে, ইউজিসির তালিকা বাতিল করে এবং নতুন নীতির মাধ্যমে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ জার্নাল নির্বাচনের পদ্ধতি তৈরি করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষামূলক গবেষণার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।