শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত, সেনসেক্স ৭৫,৫০০ এর নিচে

ভারতীয় শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, বিএসই সেনসেক্স ৮৩৩ পয়েন্ট কমে ৭৫,৪৬০.১১-তে নেমে এসেছে, এবং এনএসই নিফটি…

ভারতীয় শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, বিএসই সেনসেক্স ৮৩৩ পয়েন্ট কমে ৭৫,৪৬০.১১-তে নেমে এসেছে, এবং এনএসই নিফটি ২৪৯ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ২২,৮২২.৭০-এ অবস্থান করছে। গত পাঁচ দিনে, সেনসেক্স ২,২৯০.২১ পয়েন্ট বা ২.৯১ শতাংশ এবং নিফটি ৬৬৭.৪৫ পয়েন্ট বা ২.৮১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বাজারের এই নিম্নগতির পেছনে প্রধানত দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (FII) ধারাবাহিকভাবে পুঁজি প্রত্যাহার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির কারণে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর এফআইআই-এর পুঁজি প্রত্যাহারের পরিমাণ ১ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। মেহতা ইক্যুইটিজ লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ) প্রশান্ত তাপসে বলেন, “নিফটি ২৩,০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে গেলে আরও পতনের আশঙ্কা রয়েছে।”

   

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যা ভারতীয় বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ট্রাম্প স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক ২৫% পর্যন্ত বাড়িয়েছেন এবং অন্যান্য দেশগুলোর উপরও পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। এই সিদ্ধান্তগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের কারণ হয়েছে।

এছাড়া, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক আয় প্রতিবেদন বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। নিফটি ৫০-এর প্রায় ৬০% কোম্পানি তাদের আয় পূর্বাভাস মিস করেছে বা সামান্য মাত্রায় পূরণ করেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট এবং প্রতিকূল আবহাওয়া এই দুর্বল আয়ের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

বাজারের এই নিম্নগতির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যারা ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এনএসই মিড-ক্যাপ এবং স্মল-ক্যাপ সূচকগুলি জানুয়ারি মাসে যথাক্রমে ১০% এবং ১৫% হ্রাস পেয়েছে। এই পতন এফআইআই-এর পুঁজি প্রত্যাহারের সাথে সম্পর্কিত, যা জানুয়ারি মাসে ৮.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বিশ্ববাজারেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। শাংহাই সূচক নিম্নমুখী থাকলেও হংকং, সিউল এবং টোকিওর বাজারগুলো ইতিবাচক প্রবণতা দেখাচ্ছে। মার্কিন বাজার মঙ্গলবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা এবং মার্কিন শুল্ক নীতির পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে, যা ভারতীয় বাজারেও প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং বাজারের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীদের উচিত তাদের বিনিয়োগ পোর্টফোলিও পুনর্মূল্যায়ন করা এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করা। বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সর্বোপরি, ভারতীয় শেয়ারবাজার বর্তমানে বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারের এই অস্থির সময়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া।