মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসনের শঙ্কা, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী খুঁজতে ব্যস্ত

মণিপুরে (Manipur) এখন রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে৷ কারণ বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও উত্তরসূরি ঘোষণা করতে পারছে না। বিজেপির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন. বিরেন সিংহের…

President’s Rule Looms Over Manipur as BJP Faces Leadership Crisis After CM Resignation

মণিপুরে (Manipur) এখন রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে৷ কারণ বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও উত্তরসূরি ঘোষণা করতে পারছে না। বিজেপির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন. বিরেন সিংহের পদত্যাগের দুই দিন পরেও, রাজ্য বিজেপি কোনো নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করতে পারেনি, যার ফলে কেন্দ্রীয় শাসনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সিএনএন নিউজ১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারে নেতৃত্বের শূন্যতা এবং অস্থিরতার মধ্যে, বিজেপি রাজ্যে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে চেষ্টারত।

বিজেপির পূর্ব উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্বিত পাত্র গত কয়েকদিন ধরে ইম্ফলে অবস্থান করছেন, যেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পর রাজনীতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। তিনি রাজ্যপাল অনসুইয়া উইকির সাথে মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন, এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এন. বিরেন সিংহের পদত্যাগের পেছনে দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের সম্ভাবনা বড় কারণ হতে পারে। এই অসন্তোষের ফলে রাজ্য সরকারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং শীঘ্রই রাষ্ট্রপতি শাসন আরোপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

   

এই রাজনৈতিক সংকটের পটভূমিতে রয়েছে মণিপুরে চলমান জাতিগত সহিংসতা, যা ২০২৩ সালের মে মাস থেকে শুরু হয়েছে। এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। জাতিগত সহিংসতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন রাজ্য সরকার এক গভীর নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে।

বিজেপি নেতারা এও জানিয়েছেন যে, যদি রাষ্ট্রপতি শাসন আরোপ করা হয়, তবে রাজ্য সরকারের কার্যক্রম কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে চলে যাবে এবং রাজ্য সংসদের কার্যক্রম সংসদ গ্রহণ করবে। তবে, রাজ্য উচ্চ আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী, যখন কোনো রাজ্য সরকার সংবিধান অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম না হয়, তখন কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের অধিকার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি রাজ্যের জনগণের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে, কারণ কোনো স্থিতিশীল সরকার না থাকলে প্রশাসনিক দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এন. বিরেন সিংহের পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক কারণ এখনও পরিষ্কার নয়, তবে কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, বিজেপির অভ্যন্তরীণ দলের অসন্তোষ এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জেরে তিনি পদত্যাগ করেছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরুর পর থেকেই রাজ্য সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছিল। বিরেন সিংহের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার যে অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, সেটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিজেপির মণিপুর শাখার সভাপতি এ. শারদা দেবী, বিরেন সিংহের পদত্যাগকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, বিরেন সিংহ রাজ্যের মঙ্গল ও অখণ্ডতার জন্য নিবেদিত ছিলেন এবং তাঁর পদত্যাগে কোনো নেতিবাচক কিছু নেই। তবে, তাঁর এই বক্তব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার গভীরতা এবং রাজ্যের জনগণের কাছে এর প্রভাবকে দূর করতে সক্ষম হয়নি।

বিজেপি নেতৃত্বের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা তৈরি করার চেষ্টা করছে, তবে এর মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। রাজ্যের জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এই নেত্রীত্ব সংকটের কারণে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন এবং প্রশাসনিক সেবা আরো জটিল হতে পারে। রাজ্যে চলমান জাতিগত সহিংসতার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, এবং এটি রাজ্য সরকারের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্যপাল অনসুইয়া উইকি, যিনি এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তিনি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। তিনি রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডকে নজরে রেখেছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করছেন। তবে, রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা কম।

এদিকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মণিপুরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন যে, বিজেপি রাজ্য সরকারকে চালাতে অক্ষম, এবং জনগণের স্বার্থে এটি দ্রুত পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। দলের পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিজেপি দলের নেতারা একে একে রাজ্য সরকারের চলমান অস্থিরতা ও সংকট মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। তবে, রাজ্যে আসন্ন রাজনৈতিক সংকট আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, এবং এর প্রভাব রাজ্যের জনগণের জীবনে গভীরভাবে পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, ভবিষ্যতে মণিপুরে রাজ্য সরকারের অবস্থা কী হতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা নিয়ে রাজ্যবাসী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গভীরভাবে চিন্তা করছেন।