ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তার হালকা মেজাজের পরিচয় দিতে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে কিছু আকর্ষণীয় ডিপফেক ভিডিও শেয়ার করেছেন৷ যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ভিডিওগুলিতে তাকে দেখা যাচ্ছে ফরাসি গায়িকা ডিজায়ারলেসের ১৯৮০ দশকের জনপ্রিয় গান “ভয়েজ ভয়েজ”-এ নাচতে, ফরাসি অভিনেতা জিন ডুজার্দিনের সঙ্গে একটি স্পাই কমেডি ছবিতে অভিনয় করতে, এবং এমনকি র্যাপ ও নাচেও মেতে উঠতে।
ভিডিওগুলির প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, ম্যাক্রোঁ ক্রীতিদের প্রশংসা করেছেন, বলেছেন, “খুব সুন্দরভাবে করা হয়েছে”, এবং “এটা ভালো করে করা হয়েছে, আমাকে হাসাতে পেরেছে”। তবে তিনি একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুতর দিকগুলোও তুলে ধরেছেন, জানিয়েছেন যে, এটি স্বাস্থ্যসেবা, শক্তি এবং সমাজের অন্যান্য অনেক দিক বিপ্লবিত করতে সক্ষম।
এই ভিডিওগুলির লক্ষ্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের একটি গৌরবময় প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিখর সম্মেলনকে প্রচার করছেন, যা আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনটি বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানদের একত্রিত করবে, যেখানে ভারত সম্মেলনের সহ-সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করবে। ম্যাক্রোঁর লক্ষ্য হলো ফ্রান্স এবং ইউরোপকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে নেতৃত্বে রাখতে এবং সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে তাদের মূলনীতিগুলো প্রচার করা।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টটি ৭৩,০০০ লাইক পেয়েছে, যেখানে কিছু ব্যবহারকারী ম্যাক্রোঁর “কুল” এবং “লেট-ব্যাক” আভা প্রশংসা করেছেন, তবে কিছু ব্যবহারকারী প্রথমে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন এবং ভাবছিলেন যে ম্যাক্রোঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে। এই ভিডিওগুলি এবং ম্যাক্রোঁর প্রচেষ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের ভিডিওগুলির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আলোচনা বাড়ানোর পাশাপাশি, প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এআই অ্যাকশন সামিটটি ফ্রান্সের পক্ষে আরও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে। এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা, যেখানে ফ্রান্সের পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করবে। সম্মেলনের উদ্দেশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং এর সুফলগুলো পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।
এছাড়া ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি বড় দফতর চুক্তি হয়েছে, যার আওতায় তারা একযোগে একটি ১ গিগাওয়াট এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করবে। এই প্রকল্পের জন্য ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে উভয় দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরি করবে, যা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হতে পারে। এটি একাধিকার গবেষণা ও উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের অন্যান্য অংশে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।
এই ধরনের অংশীদারিত্ব এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ কেবলমাত্র ফ্রান্সকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে একটি শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, বরং বিশ্বের অন্য দেশের জন্যও একটি উদাহরণ তৈরি করবে। এমনকি এটি অন্যান্য উন্নত দেশগুলোকেও তাদের নিজস্ব এআই গবেষণা এবং উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে প্রেরণা যোগাবে।
এআই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, শক্তি, পরিবহন, এবং শিক্ষা খাতসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে সক্ষম। ফ্রান্স ইতোমধ্যেই এআই প্রযুক্তির বৈশ্বিক নেতা হওয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, এবং দেশটি এআই খাতে অধিক গবেষণা ও উন্নয়ন কাজের জন্য একটিভ হতে চায়। এটি শুধুমাত্র ফ্রান্সের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ এআই প্রযুক্তির উত্তরণের মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রা আরও উন্নত হতে পারে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ, তার এআই-ভিত্তিক ভিডিওগুলি ও সম্মেলন প্রচারের মাধ্যমে এই মর্মে যে মেসেজ প্রদান করতে চেয়েছেন তা হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং এর সুফল বিশ্বব্যাপী সকলের কাছে পৌঁছানো। ফ্রান্সের এই দৃষ্টিকোণগুলি দেশের প্রযুক্তিগত শক্তিকে এক নতুন মাত্রায় তুলে ধরবে।
এছাড়া, ম্যাক্রোঁর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিখর সম্মেলনটি আরও একটি পদক্ষেপ হতে পারে বিশ্বব্যাপী এআই নীতি এবং নৈতিকতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করার জন্য, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের পথে সাহায্য করবে।