বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় রেল (Indian Railway) কর্মী সঙ্কটে ভুগছে। নতুন নিয়োগ না হওয়া এবং একাধিক দক্ষ কর্মী ও আধিকারিক অবসর নেওয়ার কারণে সিস্টেম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলবোর্ড এ বিষয়ে আর কোন গোপনীয়তা রাখেনি। তারা সরাসরি কর্মী সঙ্কটের কথা ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নতুন করে আবেদন জানাতে বলা হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলের সমস্যা এখন পুরো দেশেই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় রেলের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলজোনের পাঁচটি ডিভিশন একের পর এক শূন্য পদে ভুগছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোন বড় ধরনের নিয়োগ হয়নি এবং একাধিক কর্মী অবসর নিয়েছেন। যার ফলে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং এখন পুরো সিস্টেম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি দ্রুত কর্মী নিয়োগ না করা হয়, তবে কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এই সঙ্কটের কারণে রেল কর্মীদের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ পড়ছে। অনেক কর্মী আট ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করছেন । তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অন্য কাজও করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং আধিকারিকদের পুনরায় নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। রেলবোর্ড জানিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করতে পারবেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তিনসুকিয়া ডিভিশনে ৭৭৮ জন, লামডিং ডিভিশনে ৬০৬ জন, রঙ্গিয়া ডিভিশনে ৬৫ জন, আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে ৬৮ জন, কাটিহার ডিভিশনে ৬ জন এবং মালিগাঁও ডিভিশনে ১০১ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। এই কর্মীদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫৫৫টি পদ, সিগন্যাল ও টেলিকম বিভাগে ৩৯৬টি পদ, মেকানিক্যাল বিভাগে ২৭৮টি পদ, অপারেটিং বিভাগে ১৯৮টি পদ এবং বিভিন্ন ওয়ার্কশপে আরও অনেক পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে।
এ বিষয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা বলেছেন, “রেলের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি বহু কর্মী নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ করা হচ্ছে।”
রেল সূত্রে জানা গেছে, আপাতত দু’বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হবে। এই কর্মীদের বেতন হবে অবসর নেওয়ার সময়ে যে হারে বেতন দেওয়া হতো তার সঙ্গে পেনশন বাদ দিয়ে বাকি অংশ।
এই পরিস্থিতি সবার সামনে একটি বড় সংকটের চেহারা নিয়ে এসেছে। রেল কর্তৃপক্ষ সঙ্কট মোকাবিলায় অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে চায়। তবে ভবিষ্যতে আবারও যদি কর্মী সংকট তৈরি হয়, তবে রেলের সিস্টেম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।