খাবার জীবনের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু কিছু কিছু খাবার বিষাক্ত ও বিপজ্জনকও (Dangerous Foods) বটে। তাও কোনো গোষ্ঠী বা অঞ্চলের লোকদেরকে তা খেতে দেখা যায়। হয় তারা কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে খাবারটিকে নিরাপদ করে নেন অথবা বিষাক্ততা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চলুন জানি এমনই কয়েকটি বিপজ্জনক খাবার সম্পর্কে।
১. ক্যাসাভা: এটা কন্দ জাতীয় সবজি, যেটা ট্রপিক্যাল অঞ্চলের মানুষের খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য। প্রাকৃতিক অবস্থায় এর মূল ও পাতায় সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড থাকে। সেটা দেহে গেলে ভেঙে সায়ানাইড হয়। সেখান থেকে গয়টার, প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু টিউবারের অংশ টা খাওয়া হয়। ক্যাসাভার ছাল ছাড়িয়ে পানিতে ভিজালে বা পানিতে ফুটালে বা রোদে শুকালে তা খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়ে যায়। ‘WHO’ বলে, প্রতি বছর দুইশর মতো মানুষ ক্যাসাভা পয়জনিং এ মারা যায়, হাজারখানেকের মতো লোকের মানসিক দক্ষতা কমে স্লো সায়ানাইড পয়জনিং এর জন্য।
২. পাফার ফিশ:
বিষাক্ত মাছের মধ্যে এর নাম অবশ্যই আসবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জাপানে এই মাছটাকে প্রক্রিয়াজাত করে সুশি বানানো হয়, যেটার নাম ফুগু। পাফারফিশের অনেক প্রজাতিতে টেট্রোডোটক্সিন থাকে, যা দেহকে প্যারালাইসিস করে এবং ২০ মিনিটের মধ্যে শ্বাসযন্ত্র অকার্যকর হয়ে জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে। টেট্রোডোটক্সিন, সায়ানাইডের চেয়ে ১২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত এবং ২-৩ মিলিগ্রামই প্রাণঘাতী। কিন্তু জাপানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শেফরা ফুগু তৈরি করতে পারেন, যদিও অনেক নিয়ম আছে। মাছকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে তার লিভার,কিডনি,ওভারি (যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি টক্সিন থাকে) সরিয়ে ফেলতে হয়। এরপর খাবারটা নিজেকেই টেস্ট করে দেখতে হয়। টোকিও ব্যুরো অব পাবলিক হেলথের মতে, প্রতিবছর কয়েকডজন লোক পাফারফিশ ঠিকমতো প্রক্রিয়া না করার কারণে ফুগু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জিনিসটার দামও কম নয়, এক প্লেটের মূল্য কয়েকশ ডলার।
৩.ডেথ ক্যাপ মাশরুম: বিষাক্ত খাবার বললে মাশরুমের নাম মনে পড়বে না,তা বোধহয় হবে না। যাহোক, আমানিটা গণের মাশরুম সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত, ডেথ ক্যাপও এর ভিতরেই পড়ে। এই মাশরুম খেলে বমি বমিভাব, বমি এবং ডায়রিয়া হয়। অর্ধেকটা মাশরুম খেলেই লিভার ও কিডনি ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। মাশরুমটা হিট স্টেবল, অর্থাৎ রান্না করলেও বিষাক্ততা যায় না।
৪. অ্যাকি ফল: এটা জামাইকার জাতীয় ফল। কাঁচা অ্যাকিতে হাইপোগ্লাইসিন নামের টক্সিন থাকে। ফল পাকলে গাছে থাকতেই খুলে যায়, তখন বিচির আশেপাশে যে ক্রিম কালারের পাল্প হয়, শুধু সেটাই খাওয়া যায়।
৫. রেড কিডনি বিন: এতে প্রচুর প্রোটিন ও মিনারেল থাকে, কিন্তু কাঁচা অবস্থায় প্রচুর ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন নামের টক্সিনও থাকে। এই টক্সিন অন্ত্রের প্রাচীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে খাদ্যের শোষণ ব্যহত করে। পয়জনিং এর কারণে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা,বমি ও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এই বিনের বিষাক্ততা দূর করার জন্য কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে কমপক্ষে দশ মিনিট সিদ্ধ করতে হয়।
৬. সানাকজি:
এটা দক্ষিণ কোরীয় খাবার। জ্যান্ত বাচ্চা অক্টোপাসের শুড় কেটে সিজনিং করে সাথে সাথে সার্ভ করা হয়। এটা ঠিক বিষাক্ত নয় তবে বিপজ্জনক খাবার। কেননা অক্টোপাসের শুড় আলাদা করার পরও তার সাকশান প্যাড কাজ করে, অর্থাৎ যা পায় তার সাথে আটকে যেতে চায়। এজন্য খাবারটা দ্রুত চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হয়, মুখের তালুর সাথে লেগে যাবার আগেই। অন্যথায় মুখ ও গলায় শুড় আটকে শ্বাসরোধে মৃত্যু হতে পারে। ফুড অ্যান্ড ওয়াইনের তথ্যমতে, প্রতিবছর ছয়জন মানুষ এই খাবার খেতে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।