২৭ বছর পর দেশের রাজধানীতে প্রত্যাবর্তনের পথে বিজেপি। ১৯৯৮ সালে শেষ বার তারা দিল্লির মসনদে ছিল। পরাজিত হলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
২০১৩ সাল থেকে একটানা দিল্লির নয়া দিল্লি আসনে জয়ী হয়ে আসছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই সময়, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতকে হারিয়ে তিনি প্রথমবার নির্বাচিত হন। তারপর ২০১৫ এবং ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন। একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে তিনি দিল্লির রাজনীতিতে দীর্ঘসময় ধরে প্রভাব ফেলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আম আদমি পার্টি (AAP) সফলভাবে দিল্লির ক্ষমতা দখল করে এবং একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচন তাঁর জন্য ছিল বড় এক পরীক্ষা—এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য এক ধরনের অ্যাসিড টেস্ট।
তবে, এবারের নির্বাচনে চমকপ্রদ পরিণতি দেখা গেছে। জানা গেছে, কেজরিওয়াল নিজেই বিজেপি প্রার্থী পরবেশ ভর্মার কাছে ৩১৮২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তাঁর দীর্ঘদিনের নির্বাচনী রেকর্ডের দিকে তাকালে, এ ধরনের পরাজয় অনেকটা বিস্ময়করই মনে হয়। কেজরিওয়ালের এই পরাজয়ের ফলে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এক সময় তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত, দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াও হেরে গিয়েছেন, ৬০০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন তিনি।
এই পরাজয়ের পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে আবগারি নীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুর্নীতির কারণেই কেজরিওয়াল এবং সিসোদিয়া দুজনেই আইনগতভাবে বিপদে পড়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। ২০২২ সালে মণীশ সিসোদিয়াকে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয়, এবং কেজরীবালের নামও একই ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় ভোটারদের কাছে একটি নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে, যার প্রভাব ভোটের ফলাফলে পড়েছে।
কেজরিওয়ালের পরাজয় শুধু তাঁর ব্যক্তিগত পরাজয় নয়, বরং আম আদমি পার্টির জন্যও একটি বড় ধাক্কা। তাঁদের শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান এবং একাধিক সামাজিক প্রকল্পের পরেও, যখন নির্বাচনে নেতিবাচক ফলাফল আসে, তখন এটি রাজনৈতিক দলটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তখন সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়। এই পরিস্থিতি ভোটে তাদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
তবে, কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে দিল্লিতে যেভাবে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও দলের প্রতি সমর্থন তৈরি করেছিল। যদিও এবারের ফলাফল দলের জন্য খুবই হতাশাজনক, কিন্তু ভবিষ্যতে আম আদমি পার্টি কি তাদের পরিকল্পনা ও কৌশল পরিবর্তন করবে, তা এখন দেখার বিষয়। কেজরীবাল এবং সিসোদিয়ার পরাজয়, দিল্লির রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশনা এনে দিতে পারে।