উপমহাদেশীয় ঐতিহ্য রাজনীতিতে ধাক্কা, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে মুজিব-হাসিনার আওয়ামী লীগ

উপমহাদেশ-অর্থাৎ ভারত বিভাগের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে এভাবেই ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা হয়। এই উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ এমন একটি দল মূলত যাদের নেতৃত্বেই ১৯৭১…

Traditional political party Awami League is being banned in Bangladesh

উপমহাদেশ-অর্থাৎ ভারত বিভাগের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে এভাবেই ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা হয়। এই উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ এমন একটি দল মূলত যাদের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিরোধী গণআন্দোলনে বাংলাভাষী পাক নাগরিকরা পৃথক দেশ-‘বাংলাদেশ’ (Bangladesh) গঠন করতে পেরেছিলেন। তবে এই দেশটি গঠনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (বর্তমান সিপিবি) ও আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ) দল দুটিরও বিশেষ ভূমিকা ছিল। রাজনৈতিক পালাবদলেন ধাক্কায় বাংলাদেশেই নিষিদ্ধ হতে চলেছে রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ দলটিকেই নিষিদ্ধ করার বার্তা এলো অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে। বাংলাদেশে সর্বাধিক সময়ে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ তালিকায় চলে গেছে। গত বছর (২০২৪) গণবিদ্রোহে বাংলাদেশে শেষ হয়েছে আওয়ামী লীগের টানা তিন দফার শাসন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে আছেন।

   

নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।

আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনি কাঠামো কী হবে এ বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিষয়টি যেহেতু আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ভারত থেকে দলীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তাঁর দলের বহু হেভিওয়েট নেতাদের বিপুল আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ আসছে। অভিযোগ, টানা তিন দফায় বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। আরও অভিযোগ, সেই সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে পাচার করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে আসছে দুর্নীতির কলঙ্ক লাগলেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য অটুট থাকবে। সংযুক্ত পাকিস্তান আমলে বাংলাভাষী পাক নাগরিকদের অস্তিত্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িয়ে গেছিল।

এক নজরে আওয়ামী লীগ
১) ১৯৪৯ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২) ১৯৫৫ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
৩) ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ তৈরি হয়। তখন থেকে দলটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
৪) ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ছিল আওয়ামী লীগ।