আবার অশান্ত পাহাড়, এবারে টি- ট্যুরিজম নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশনের চিফ অনিত থাপার। তিনি বলেছেন গোর্খাল্যান্ড এ টি ট্যুরিজম করা যাবে না। চা বাগানে রিসর্ট বা হোমস্টে করলে চা উৎপাদনের ক্ষতি হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গতকালই জানিয়েছেন যে পাহাড়ের ৩০ শতাংশ জমি পর্যটনের জন্য ব্যাবহার করা হবে। এমতাবস্থায় একটি রাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।
অনিত থাপার বলেন, “চা শিল্প আমাদের প্রধান জীবিকা। এটি কেবল ব্যবসা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। চা বাগানের জমিতে পর্যটনের জন্য পরিকাঠামো গড়ে তুললে তা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করবে।” তিনি আরও বলেন, “চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে কথা না বলে, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা না করে এই ধরনের পরিকল্পনা করা উচিত নয়। টি-ট্যুরিজমের নামে চা শিল্পকে ধ্বংস করা হলে আমরা তা মানতে পারবো না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে পর্যটনের প্রসার ঘটানোর জন্য টি-ট্যুরিজমের ধারণা সামনে এনেছেন। তিনি বলেন, “পাহাড়ে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চা বাগান ও তার আশপাশের এলাকায় রিসোর্ট, হোমস্টে এবং অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে স্থানীয় মানুষের জীবিকা আরও উন্নত হবে। পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে।”
রাজ্য সরকারের দাবি, চা শিল্প ও পর্যটন একসঙ্গে বিকশিত হতে পারে এবং এতে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। সরকারের মতে, টি-ট্যুরিজম চালু হলে চা বাগানগুলির পাশাপাশি পর্যটনও লাভবান হবে। এই মন্তব্যের পর থেকেই পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। অনিত থাপার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের মতে, রাজ্য সরকার জোর করে এই প্রকল্প চাপিয়ে দিচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের স্বার্থবিরোধী। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে, পর্যটন প্রসার ঘটলে গোর্খাল্যান্ডের মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবেন।
চা শ্রমিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, পর্যটন বাড়লে তাদের বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি হবে। তবে বেশিরভাগ শ্রমিক চিন্তিত, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন, টি-ট্যুরিজমের জন্য জমি ব্যবহৃত হলে চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের রোজগার কমে যাবে। একজন স্থানীয় চা শ্রমিক বলেন, “আমরা চা বাগানে কাজ করি। যদি পর্যটনের জন্য আমাদের জমি ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সরকার কি আমাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে?” তবে এর উত্তর সময়ই দেবে যে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়।