মদ নিষিদ্ধ, চালু হবে দুধের দোকান! নেশামুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের নয়া উদ্যোগ

মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার সম্প্রতি একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, যা জনগণের মধ্যে নানা আলোচনার সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ঘোষণা করেছেন যে, সমস্ত মদের…

Madhya Pradesh Government to Phase Out Alcohol Shops and Open Milk Shops

মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার সম্প্রতি একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, যা জনগণের মধ্যে নানা আলোচনার সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ঘোষণা করেছেন যে, সমস্ত মদের দোকান বন্ধ করে সেখানে দুধের দোকান খোলা হবে। এই সিদ্ধান্তটি রাজ্যের উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হলেও, এর সঙ্গে সম্পর্কিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে নানা মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরেই মদ্যপানের বিরুদ্ধে সরব ছিল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মদ নিষিদ্ধকরণের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রদেশের সরকারও সেই পথে হেঁটে মদের দোকান বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৪ সালে ১৭টি শহরে মদের দোকান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে উজ্জয়িনী, চিত্রকূট, ওমকারেশ্বর, মণ্ডলেশ্বর এবং দাতিয়া, এই সমস্ত শহরগুলো মূলত ধর্মীয় স্থান এবং সেগুলির পরিবেশকে আরও পবিত্র করার জন্য মদ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

   

মোহন যাদবের মতে, মদ নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে রাজ্যের যুবসমাজকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখা যাবে, এবং দুধের দোকান খোলার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা উৎসাহিত হবে। তার মতে, দুধ একটি পুষ্টিকর ও নিরাপদ বিকল্প যা মদ্যপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করবে। এমনকি বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী আগেই পরামর্শ দিয়েছিলেন, “মদ নয়, দুধ খাও,” যা এই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে আরও যুক্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে।

তবে এই ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, মদ নিষিদ্ধ করার ফলে কি সত্যিই এর ব্যবহার কমে যাবে, নাকি এর জায়গায় বেড়ে যাবে মদের চোরাচালান? বিহারের উদাহরণ সামনে রেখেই এই প্রশ্ন উঠছে। বিহারের মদ নিষিদ্ধকরণের পরও রাজ্যজুড়ে মদ খাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে চোরাচালান এবং লুকিয়ে মদ খাওয়ার ঘটনা। অনেক সময় বিষমদ খেয়ে মানুষের মৃত্যু খবরও সামনে এসেছে। তাই শুধু মদের দোকান বন্ধ করে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে আরও সুদূরপ্রসারী নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।

একইসঙ্গে, এমন একটি উদ্যোগে খোদ রাজ্যবাসীর জীবনযাত্রার ওপর যে বিশাল প্রভাব পড়বে, তা অনুধাবন করাও গুরুত্বপূর্ণ। মদ বিক্রির মাধ্যমে রাজ্য সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে, যা বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়। মদের দোকান বন্ধ হলে সেই রাজস্বের অভাব কীভাবে পূরণ করা হবে, এবং এর ফলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

শেষমেশ, এই উদ্যোগ যে শুধুমাত্র মদ নিষিদ্ধকরণের লক্ষ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজ্যের সমগ্র সমাজের উন্নতির জন্য নেওয়া একটি বৃহৎ পদক্ষেপ, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে, বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, মদ নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপকে এককভাবে সফল হতে দেওয়া কঠিন। এটি একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হতে হবে, যেখানে সচেতনতা বৃদ্ধি, জনগণের মাঝে সামাজিক নৈতিকতা গড়ে তোলা, এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মদ্যপান ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।