পাহাড়ের চা শিল্পে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্টের সভাপতি অজয় এডওয়ার্ডস সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, “পূজো বোনাসের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। শ্রম দপ্তর আগে সেই সমস্যা মেটাক। তারপরই পাহাড়ের বাগানে চা পাতা তুলতে দেওয়া হবে।”এই হুঁশিয়ারির ফলে পাহাড়ের চা শিল্পে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে।
ফার্স্ট ফ্লাশ হলো বছরের প্রথম চা পাতা তোলার সময়, যা সাধারণত মার্চ মাসে শুরু হয়। এই সময়ে তোলা চা পাতার মান অত্যন্ত উচ্চমানের হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ও মূল্য উভয়ই বেশি। ফার্স্ট ফ্লাশ থেকে চা বাগানগুলি আয়ের একটি বড় অংশ অর্জন করে।
প্রতি বছর চা বাগানের শ্রমিকদের পূজো বোনাস প্রদান করা হয়, যা তাদের বার্ষিক আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, চলতি বছরে এই বোনাসের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। কয়েক দফা বৈঠকের পর ১৬ শতাংশ বোনাস দেওয়া চালু হয়েছিল কিন্তু শ্রমিক উনিয়নগুলি সেই বোনাস ২০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে , যার এখনো কোনো নিস্পত্তি হয়নি। অন্যদিকে মালিকপক্ষ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে সেই দাবি পূরণে অসম্মতি জানাচ্ছে।
অজয় এডওয়ার্ডসের এই ঘোষণায় শ্রমিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, বোনাস পাওয়ার জন্য এটি একটি কার্যকর চাপ সৃষ্টি করবে, আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, ফার্স্ট ফ্লাশ বন্ধ থাকলে তাদের আয়েও প্রভাব পড়বে। চা বাগান মালিকরা এই হুঁশিয়ারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ফার্স্ট ফ্লাশ বন্ধ থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে দার্জিলিং চায়ের সরবরাহ কমে যাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে শিল্পের ক্ষতি করবে। তারা আশা করছেন, শ্রম দপ্তর দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে।
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত শ্রম অধিকর্তা শ্যামল দত্ত বলেছেন, “পাহাড়ের চা বাগানের বোনাস নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার দপ্তরের মন্ত্রী বলবেন।” এ থেকে বোঝা যায় যে, সরকার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফার্স্ট ফ্লাশ বন্ধ থাকলে চা শিল্পের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দার্জিলিং চায়ের সুনাম রয়েছে, এবং সরবরাহ কমে গেলে ক্রেতারা বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এছাড়া, শ্রমিকদের আয়েও প্রভাব পড়বে, যা তাদের জীবিকায় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।