মাত্র এই বেতনেই আপনি হবেন কোটিপতি! এপিএফ-এর মাধ্যমে জানুন সেই পদ্ধতি

বর্তমানে বহু মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে কোটিপতি হওয়াটা একটা স্বপ্নের মতো। নানা ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে এক কোটি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা শোনা যায়। তবে আপনি কি…

epf-crorepati-with-10000-pay-calculation

বর্তমানে বহু মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে কোটিপতি হওয়াটা একটা স্বপ্নের মতো। নানা ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে এক কোটি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা শোনা যায়। তবে আপনি কি জানেন, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড(EPF)-এর মাধ্যমে আপনি এক কোটি টাকার একটি বড় ফান্ড গঠন করতে পারেন? এটি সত্যিই একটি নির্ভরযোগ্য, দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় পদ্ধতি যা আপনাকে একাধিক সুবিধা দিতে সক্ষম। চলুন জানি, এপিএফ-এর মাধ্যমে কীভাবে আপনি ১০,০০০ টাকার বেতন থেকেও এক কোটি টাকা গঠন করতে পারেন।

এপিএফ কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

   

এপিএফ ১৯৫২ সালে ভারত সরকারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি ভারতে কর্মরত সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা ফান্ড হিসেবে কাজ করে। এপিএফ কর্মচারীর বেসিক এবং ডিএ (ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স) এর ১২% কাটে, যার মধ্যে ৩.৬৭% প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। এটি একজন কর্মীর চাকরি জীবনের শেষে একটি বড় অর্থ সঞ্চয় করে, যা তার অবসরকালীন জীবনকে সুরক্ষিত করে।

এপিএফ কেবল ১২% (বেসিক + ডিএ) কর্মচারীর মাইনে থেকে কাটা হয়, এবং এর সাথে ৩.৬৭% করে প্রতিষ্ঠান থেকে অবদান যুক্ত হয়। এইভাবে প্রতি মাসে কিছুটা অর্থ জমা হতে থাকে এবং ইন্টারেস্টের মাধ্যমে এটি সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। এছাড়া, ৮.২৫% সুদের হার থাকে যা এই ফান্ডে দেয়। এটি এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ যেখানে সম্পদের সুদের হার প্রভূতভাবে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

এপিএফ-এর মাধ্যমে এক কোটি টাকা কিভাবে গঠন করবেন?

ধরা যাক, একজন যুবক/যুবতী তার কর্মজীবন শুরু করেছেন ২২ বছর বয়সে, এবং তিনি ৫৮ বছর বয়সে চাকরি শেষ করবেন। তার প্রাথমিক বেসিক মাইনে ১০,০০০ টাকা, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট মনে হলেও এটি এপিএফ-এ একটি ভালো পরিমাণ সঞ্চয় গঠনের সুযোগ দেয়। এখন চলুন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা দেখি কীভাবে EPF তার জন্য এক কোটি টাকার লক্ষ্য পূর্ণ করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথম পরিস্থিতি (৭% বেতন বৃদ্ধি) :
এখন, যদি তার বেতন বছরে ৭% বাড়ে, এবং ৮.২৫% সুদের হার ধরে রাখা হয়, তাহলে ৫৮ বছর বয়সে তার এপিএফ-এর কিটিতে জমা হবে ১,১৩,৬৪,০০৩ টাকা। অর্থাৎ, এটি এক কোটি টাকার থেকেও বেশি হবে। ৩০ বছরের এই দীর্ঘ সময়ে EPF-এর সুদের হার এবং সঞ্চয়ের কারণে তার সঞ্চিত অর্থ অনেক বাড়বে।

দ্বিতীয় পরিস্থিতি (৬.৫% বেতন বৃদ্ধি) :
যদি তার বেতন বৃদ্ধির হার ৬.৫% ধরা হয়, তবে ৫৮ বছর বয়সে তার এপিএফ-এর কিটিতে জমা হবে ১,০৩,৫৫,৫৮৪ টাকা। অর্থাৎ, এটি এখনও এক কোটি টাকার উপর থাকবে, যদিও সল্প বেতন বৃদ্ধির কারণে পরিমাণ কিছুটা কমবে।

তৃতীয় পরিস্থিতি (৬% বেতন বৃদ্ধি) :
এবার যদি ৬% বেতন বৃদ্ধি ধরা হয়, তবে ৫৮ বছর বয়সে তার এপিএফ-এর কিটি দাঁড়াবে ৯৪,৪৫,০৯০ টাকা, যা প্রায় ৯৪.৪৫ লাখ টাকার সমান। এটি এক কোটি টাকার নিচে হলেও, এটি একটি যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ যা তার অবসরকালীন জীবনের জন্য আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করবে।

এপিএফ-এর সুবিধা :

1.দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি : এপিএফ একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, যেখানে কমপাউন্ড সুদের মাধ্যমে সঞ্চয় বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এটি আপনার সঞ্চয়ের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

2.সরকারি সুরক্ষা : এপিএফ একটি সুরক্ষিত ফান্ড, যা ভারত সরকারের অধীনে কাজ করে। এটি নিরাপদ এবং কোনও ঝুঁকি ছাড়াই আপনার সঞ্চয় বাড়ায়।

3.সুদের হার : এপিএফ একটি উচ্চ সুদের হার প্রদান করে, যেমন বর্তমানে ৮.২৫%। এটি সময়ের সাথে সাথে আপনার মূলধন বাড়াতে সাহায্য করে।

4.কর সুবিধা : এপিএফ থেকে প্রাপ্ত সুদ এবং মোট সঞ্চয় আয়কর মুক্ত। ফলে আপনি ট্যাক্সের সুবিধা পাবেন এবং আপনার সঞ্চয় আরও বাড়বে।

এটা বলা যেতে পারে যে, ১০,০০০ টাকার বেতন থেকেও এপিএফ-এর মাধ্যমে আপনি এক কোটি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন, যদি আপনি নিয়মিত এতে অংশগ্রহণ করেন এবং যথেষ্ট সময় ধরে এটি বৃদ্ধি হতে দেন। আপনি যদি বেতন বৃদ্ধির হার এবং সুদের হার নিয়ে একটু সচেতন থাকেন, তবে এপিএফ আপনার এক কোটি টাকার লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়ক হতে পারে। সুতরাং, এপিএফ শুধু একটি সঞ্চয় ফান্ড নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা।