বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নতুন একটি গ্রহাণু আবিষ্কার করেছেন, যার নাম 2024 YR4। এটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চিলির ATLAS টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রথমবার শনাক্ত করা হয়। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, এই গ্রহাণুর ব্যাস ৪০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে হতে পারে এবং এটি ২২ ডিসেম্বর ২০৩২ সালে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। তবে সবচেয়ে আলোচিত ব্যাপার হলো, এটির পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত, একটি নতুন গ্রহাণু আবিষ্কৃত হওয়ার পর, কিছুদিন এর কক্ষপথ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াটা একটু কঠিন হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কিছুটা উদ্বেগজনক তথ্য আসলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরে দেখা যায় যে এটি পৃথিবীর জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। Apophis নামের আরেকটি গ্রহাণুর ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল। প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যে, এটি ২০২৯ সালে পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে, কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দেখা যায় যে এটি নিরাপদেই পাশ কাটিয়ে যাবে।
NASA সহ, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) এবং অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো এখন ২০২৪ YR4-এর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছে। “টোরিনো স্কেল” নামের একটি স্কেলে এই গ্রহাণুর ঝুঁকি ৩ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মোটেও চূড়ান্ত বিপদের সংকেত নয় বলে মনে করা হয়, তবে পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
এখন বিজ্ঞানীরা এই গ্রহাণুর কক্ষপথ আরও ভালোভাবে নির্ধারণ করতে কাজ করছেন। পরবর্তী পর্যবেক্ষণ থেকে এটি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ২০৩২ সালে এটি পৃথিবীকে আঘাত করবে কি না। সাধারণত, নতুন তথ্য সংগ্রহের পর অনেক সময়ই গ্রহাণুর আঘাত হানার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ঝুঁকি কম বলে প্রমাণিত হয়।
যদি সংঘর্ষের ঝুঁকি থাকে, তাহলে কী করা হবে?
যদি ভবিষ্যতে দেখা যায় যে এই গ্রহাণুর সত্যিই পৃথিবীতে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে বিজ্ঞানীরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেবেন। NASA ও ESA-এর মতো সংস্থাগুলো গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছে। DART (Double Asteroid Redirection Test) মিশনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো গ্রহাণুকে পৃথিবীর দিক থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে।
সর্বশেষে বলা যায়, ২০২৪ YR4 সম্পর্কে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৯৯% সম্ভাবনা রয়েছে যে এটি আমাদের গ্রহকে নিরাপদে পাশ কাটিয়ে যাবে। তবে বিজ্ঞানীরা অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন। মহাকাশের রহস্য উন্মোচনের এই যুগে, গ্রহাণুর মতো মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে গবেষণা আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।