পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক (BGBS) দৃশ্যপটকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে বুধবার শুরু হচ্ছে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’(BGBS)। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় শুরু হতে চলেছে অষ্টম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালদের মতো দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতিদের উপস্থিতি, অন্যদিকে জার্মানি থেকে জাপান তথা ইউরোপের নামী বণিকমহলের উপস্থিতিতে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সূচনা হবে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের।
এবারের বাণিজ্য সম্মেলন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এবছর সিআইআই (CII) ও ফিকির (FICCI) জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসছে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারেই। মঙ্গলবার বিকেলেই শহরে শুরু হবে চা চক্রের মিলনমেলা ও বুধবার দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। তবে এবারের সম্মেলনটি অন্য সমস্ত সম্মেলনের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্য সরকার নতুন বিনিয়োগের সুযোগকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বড় বড় হোর্ডিং এবং ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনায় “বেঙ্গল মিনস বিজনেস” থিমের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে বাণিজ্যের এই বিশাল মিলনমেলা, যা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
সম্মেলনে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে ক্ষুদ্র শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, টেক্সটাইল, কৃষিভিত্তিক পণ্য এবং কুটির শিল্প। কৃষি, প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কারিগরি শিক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, বিদ্যুৎ এবং বিনোদন – এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিশদ আলোচনা হবে। সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে উৎপাদনমূলক খাতে এবং তারই সঙ্গে শিল্পের উন্নতির জন্য সরকারের নানা উদ্যোগও তুলে ধরা হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের সুযোগকে আরও বৃদ্ধি করবে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের উপস্থিতি। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবার বাংলার সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে। ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামগেল ওয়াংচুকও সম্মেলনে যোগ দেবেন। এই যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলার সঙ্গে ভুটানের নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে দেশ-বিদেশের প্রায় ২০টি দেশ অংশ নেবে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য থাকবে শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে এই সম্মেলন থেকে বড় বিনিয়োগ টানার। এমনকি সেমিকন্ডাক্টর, চামড়া, টেক্সটাইল, কৃষি, ভারী শিল্প এবং পর্যটন খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের পাশাপাশি, সম্মেলনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এখানে বাংলার নিজস্ব হস্তশিল্পের প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্থানীয় খাবারের আয়োজন থাকবে। দার্জিলিংয়ের সুগন্ধী চা এর স্বাদ নেওয়া থেকে বাঁকুড়ার টেরাকোটার ঘোড়া সবই থাকবে এখানে। পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্যের রঙিন মুখোশ পরে পা মেলাতেই পারেন ছৌ নাচে।
সম্মেলন শেষে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। যা আখেরে হয়ে উঠতে চলেছে শিল্পপতি, প্রশাসক ও স্থানীয় উদ্যোগপতিদের ‘গেট টুগেদার’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে লগ্নির জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বিদেশ সফরও করেছেন এবং প্রতিটি সম্ভাব্য সুযোগে রাজ্যে লগ্নির আহ্বান জানিয়েছেন। চলতি বছরের বিজিবিএস নিয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। বাংলাকে বিশ্বের দরবারে শিল্প সম্ভাবনায় কতটা এগিয়ে নিয়ে যায় এই সম্মেলন, সেটাই এখন দেখার।