উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার এক যুবক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে প্রিপেইড টাস্ক স্ক্যামের (Prepaid Tasks Scam) শিকার হয়েছেন। সাইবার অপরাধীরা তাকে প্রাথমিকভাবে একটি লাভজনক স্কিমের প্রস্তাব দিয়ে ফাঁদে ফেলে, যেখানে প্রতিদিন ২০০০ থেকে ৮০০০ টাকা উপার্জনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, ওই যুবক ৫১ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৭৭ টাকা হারিয়ে দেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশন একটি মামলা দায়ের করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার গ্রেটার নোইডা পশ্চিমের বাসিন্দা অভিষেক শর্মা, গত ১৮ জানুয়ারি একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পান। ওই মেসেজের প্রেরক নিজেকে পল্লবী বলে পরিচয় দেন এবং তাকে একটি প্রিপেইড টাস্ক স্কিমে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই স্কিমের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০০ থেকে ৮০০০ টাকা উপার্জন করার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে অভিষেক বিশ্বাস করতে না পারলেও, সেখানেই পল্লবী তাকে আরও ব্যাখ্যা দেন এবং এক পর্যায়ে তাকে টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগদান করান। এরপর পল্লবী তাকে টাস্ক সম্পন্ন করার জন্য একটি বিশেষ প্রিপেইড প্ল্যানের কথা জানান, যা শেষ পর্যন্ত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমের মাধ্যমে চলতে থাকে।
শুরুতে স্কিমটি একেবারে স্বাভাবিক মনে হলেও, অভিষেক ধীরে ধীরে বুঝতে পারেননি যে তিনি একটি বড় প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রথমে কিছুটা ছোট পরিমাণ টাকা পাঠানোর পর, তার প্রাপ্ত লাভের পরিমাণও দেখতে শুরু করেন। তবে পরে সেখানেই প্রতারকরা তাকে আরও বড় পরিমাণে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর ওই যুবক মোট ৫১,৬৩,২৭৭ টাকা ৩২টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ওই স্কিমে পাঠিয়ে দেন, যা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চলে যায়।
তবে এক সময় তিনি একটি লিংক পেয়ে দেখেন যে তার প্রাপ্ত লাভের পরিমাণ ৬,০০,০০০ টাকা হয়েছে, যা পুরো বিষয়টিকে আরও সন্দেহজনক করে তোলে। তখন তিনি প্রতারকদের কাছে তার টাকা ফেরত চাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা নতুন দাবি করে যে তাকে আরও টাকা দিতে হবে, যেমন VVIP চ্যানেল ফি, নির্মাণ কর, এবং জরিমানা পরিশোধ করার অজুহাত তুলে।
এমনকি তারা তাকে আশ্বাস দেয় যে যদি সে এই অতিরিক্ত টাকা পাঠায়, তাহলে তার পুরো অর্থ ফেরত পাবে। কিন্তু অভিষেক তখন সন্দেহাতীত হয়ে পড়েন এবং তার এক বন্ধু তাকে এই স্কিমের বিষয়ে সতর্ক করেন। তার বন্ধু তাকে বলেন, “এটা সবই একটি বড় ধাপের প্রতারণা, তাড়াতাড়ি তোমার টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়।”
তাহলে, অভিষেক সরকারী সাইবার ক্রাইম পোর্টালে অনলাইন অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের পর সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশন নিশ্চিত করে যে মামলা রেজিস্টার করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের স্কিমে অনেকেই ফাঁদে পড়ছে। প্রিপেইড টাস্ক এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে, এসব প্রস্তাব সঠিক এবং বৈধ নয়, তাই সাধারণ মানুষকে এ ধরনের প্রস্তাবে আকৃষ্ট না হওয়ার জন্য সচেতন হতে হবে।
এছাড়া, এটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য সরকার এবং পুলিশের আরও কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এসব স্ক্যাম বন্ধ করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এখন পর্যন্ত অভিষেকের অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে যে তারা সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা থেকে মানুষকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং অনলাইনে টাকা লেনদেন বা বিনিয়োগ করার আগে সবসময় সতর্ক হওয়া উচিত।
এছাড়া, অভিষেক শর্মা এবং তার মতো আরও অনেকের এই ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে সচেতনতার অভাবকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতারণার এ ধরনের স্কিমগুলো সাধারণত মানুষের লোভকে কাজে লাগিয়ে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়।
সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হওয়া এবং সব সময় সন্দেহজনক প্রস্তাব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।