ভিক্ষা করছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা, ফেসবুকে জানলেন সুকান্ত

বীরভূমের বিজেপি নেতা ইন্দ্রজিৎ সিনহা (Indrajit Sinha), যিনি সকলের কাছে বুলেট দা নামে পরিচিত, এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় তিনি ছিলেন বঙ্গ বিজেপির…

BJP Leader Indrajit Sinha’s Plight Sparks Controversy, Sukhanta Majumdar and Shubhendu Adhikari Step In

বীরভূমের বিজেপি নেতা ইন্দ্রজিৎ সিনহা (Indrajit Sinha), যিনি সকলের কাছে বুলেট দা নামে পরিচিত, এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় তিনি ছিলেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের ইনচার্জ এবং রাজ্য বিজেপির আমন্ত্রিত সদস্য। কিন্তু বর্তমানে তাঁর স্বাস্থ্য ভীষণ খারাপ। গলায় টিউমার ধরা পড়েছে, চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই।

ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য নেতা
বীরভূমের বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, ইন্দ্রজিৎ সিনহা গত কয়েকদিন ধরে তারাপীঠ শ্মশানে পড়েছিলেন। সেখানেই তিনি ভিক্ষা করতেন, কারণ তাঁর আর কোনো উপায় ছিল না। একসময় দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও এখন তাঁর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্যও তাঁকে অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

   

সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল খবর
রবিবার এই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, একজন বিজেপি নেতা এত দুর্দশার মধ্যে পড়লেও কেন দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি? সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর দুর্দশার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের নজরে আসে ঘটনাটি।

সুকান্তর প্রতিক্রিয়া
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি লেখেন,

“মাননীয় শ্রী ইন্দ্রজিৎ সিনহা মহাশয় ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের একজন কর্মঠ এবং পুরনো কর্মী। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে আমার সহকর্মীদের একাধিক পোস্ট থেকে তাঁর বর্তমান করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মাননীয় ধ্রুব সাহা মহাশয়ের সঙ্গে ইন্দ্রজিৎ সিনহার বিষয় নিয়ে কথা বলেছি এবং ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি হিসেবে বীরভূম জেলা নেতৃত্বকে অতি দ্রুত ওনার পাশে দাঁড়িয়ে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি। ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গ এর পুরো পরিবার ওনার পাশে সর্বদা রয়েছে।”

শুভেন্দু অধিকারীর সাহায্য
বিজেপির একাংশের দাবি, ইন্দ্রজিৎ সিনহার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবারই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। শুভেন্দু অধিকারী নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

প্রশ্নের মুখে দলীয় দায়িত্ব
এই ঘটনার পর বিজেপির ভেতরেই প্রশ্ন উঠছে, একজন প্রবীণ এবং দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নেতা কীভাবে এমন পরিস্থিতিতে পড়লেন? কেন তিনি দলের কাছ থেকে সাহায্য পাননি? কেন তাঁকে সাহায্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? দলের ভেতরেই অনেকে মনে করছেন, বিজেপি তার পুরনো এবং ত্যাগী নেতাদের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ছে।

বিজেপির ভাবমূর্তির প্রভাব
এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বিজেপির সমালোচনায় নেমেছে। তারা বলছে, বিজেপি শুধু ক্ষমতার লড়াই করে, কিন্তু দলের পুরনো নেতাদের দেখভাল করতে পারে না। অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপ দলের ভেতরেও নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে সামনে এনে দিয়েছে। যে দল তার নেতাদের কঠিন সময়ে সাহায্য করতে পারে না, তাদের সংগঠন কতটা মজবুত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইন্দ্রজিৎ সিনহার মতো একজন নেতা যিনি দীর্ঘদিন দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করেছেন, তাঁকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, তা দলের ভাবমূর্তির ওপরও বড়সড় প্রভাব ফেলবে।

ইন্দ্রজিৎ সিনহার ঘটনা বিজেপির অভ্যন্তরীণ সংকটকে উন্মোচিত করেছে। যদিও এখন তাঁকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য করা হচ্ছে, তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপিকে ভাবতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। দলীয় নেতৃত্বকে এখন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, কারণ একজন ত্যাগী নেতা কেন এতটা অবহেলিত হলেন, তার কোনো স্পষ্ট উত্তর নেই।