বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন তেমনই বারো মাসে চোদ্দ পার্বন বললেও কিছু অত্যুক্তি হয়না। কলকাতায় শুরু হয়েছে ৪৮ তম আন্তর্জাতিক বইমেলা , যা নিয়ে বাঙালির উত্তেজনার পারদ চড়েছে। বইমেলা শুরু হয়েছে গত ২৮এ জানুয়ারী থেকে যা চলবে আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এর মধ্যেই উঠে এসেছে একটি প্রশ্ন যা সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত দেড় দশকের ও বেশি সময় ধরে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে অডিও স্টোরি। বিখ্যাত সাহিত্যিকদের গল্প অবলম্বনে তৈরী হচ্ছে এই অডিও স্টোরি যা দেশের তথা বিদেশের মানুষের ও মন জয় করেছে একটা বড় সময় ধরে। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালি যারা সবসময় বাংলা সাহিত্য হাত বাড়ালেই পান না কিন্তু যাদের কাছে ভাষার গুরুত্ব আছে তাদের কাছে এই অডিও স্টোরি র মাদ্ধমে সাহিত্য সৃষ্টি পৌঁছে দেবার প্রয়াস সত্যি প্রবাসী বাঙালিদের বাংলার সাথে জুড়ে থাকতে সাহায্য করেছে।
একটি সাম্প্রতিক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত রেডিও জকি দীপাঞ্জন ঘোষ এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত । দীপাঞ্জন ঘোষ এই অডিও স্টোরি র জগতে একটি ইমোশন এবং তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে অডিও স্টোরি সত্যি মানুষকে সাহিত্য মুখি করেছে কিন্তু এটা সর্বৈব সত্য নয় যে বাঙালি বই পড়তে চাইছেন না । বরং এই গল্প গুলো শুনে বাঙালি আরো বেশি বই পড়তে আগ্রহী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে এমন কিছু বই আছে যেগুলো কখনোই অডিও স্টোরি হিসেবে কখনো শোনানো সম্ভব নয় , উদাহরণ স্বরূপ ইবনবতুতা র ভ্রমণ কাহিনী র কথা উল্লেখ করে বলেন এই ধরণের দুষ্প্রাপ্য সাহিত্যের স্বাদ পেতে গেলে কিন্তু বই কিনেই পড়তে হবে। এছাড়া তার মতে কিছু পাবলিশার দাবি করেছেন যে সেই পাবলিকেশন থেকে বেরোনো গল্প অডিও স্টোরি হবার পর বই বিক্রি আরো বেড়েছে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্তের বক্তব্য। প্রখ্যাত লেখক বলেন যে “আগে এতো ভাবতে হতো না কিসের জন্য লিখছি তবে এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে অডিওস্টোরি র কথা ভেবেও লিখতে হচ্ছে”। কিছু অডিও স্টোরি চ্যানেল তাকে তাদের জন্য লিখতে অনুরোধ করেছে এবং তা সম্পূর্ণ সংলাপ ধর্মী রূপে। তবে তিনি শেষে একথা ও বলেছেন যে কিছু মানুষ বইপড়ার মানুষিকতা হারালেও এখনো অগুন্তি মানুষ আছেন যারা বইমেলা তে ভিড় করেছেন শুধু বই কিনে পড়বার জন্য।
সরস্বতি পুজোর দুপুরে বইমেলার চেনা চেহারা এ চোখে পড়লো এবছর। ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এবার মোট আট টি গেট করা হয়েছে গিল্ড এর তরফ থেকে। মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী , জার্মান প্রতিনিধি ফিলিপ অকারম্যান , সাহিত্যিক আবুল বাশার প্রমুখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবারের মতোই এবারেও বইমেলা নিয়ে বাঙালির উৎসবের আবেগ দেখে গেল , বিশেষ করে কিছু পাবলিকেশন এর ষ্টল যেমন আনন্দ , পত্র ভারতী , কথা ও কাহিনী র সামনে ভিড় ছিল দেখার মতো। রীতিমতো লাইন দিয়ে ষ্টল এ ঢুকতে দেখা গেলো বইপ্রেমী বাঙালিকে। সমস্ত বিতর্ক প্রশ্ন কে দূরে সরিয়ে দিয়ে পাঠকেরা প্রমান করেছে যে তারা কখনোই বই পড়ার অভ্যেস থেকে দূরে সরে যায়নি।