থ্রাস্টার সমস্যায় কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারল না ISRO’র NVS-02 স্যাটেলাইট

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ NVS-02 স্যাটেলাইটটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করতে পারল না, কারণ স্যাটেলাইটের থ্রাস্টারগুলো কাজ করেনি। এটি একটি বড় বিপর্যয়…

ISRO's NVS-02 Satellite Encountered Problem, Fails to Reach Orbit

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ NVS-02 স্যাটেলাইটটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করতে পারল না, কারণ স্যাটেলাইটের থ্রাস্টারগুলো কাজ করেনি। এটি একটি বড় বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এই স্যাটেলাইটটি ভারতের নিজস্ব মহাকাশভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, ISRO তাদের ১০০তম রকেট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে GSLV-Mk 2 রকেটটি ব্যবহার করে NVS-02 স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করেছিল। তবে, উৎক্ষেপণের পর স্যাটেলাইটটি যে কক্ষপথে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেখানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এতে ISRO’র দীর্ঘমেয়াদী নেভিগেশন সিস্টেমের কার্যকারিতা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য নির্ভুল নেভিগেশন সুবিধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

   

বিপর্যয়ের কারণ এবং ব্যাখ্যা
ISRO’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য যে থ্রাস্টারগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিডাইজার প্রবাহিত করার জন্য ভ্যালভগুলি খুলতে পারেনি। যার কারণে কক্ষপথ পরিবর্তনকারী অপারেশনগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে স্যাটেলাইটটি বর্তমানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে একটি ঊর্ধ্বগামী ভূ-জ্যোতির্বিজ্ঞানে স্থানান্তরিত কক্ষপথে (Geosynchronous Transfer Orbit বা GTO), যা স্যাটেলাইটটির নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত নয়।

এটি একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা যা রকেট উৎক্ষেপণের পর সাধারণত কিছু সময়ের মধ্যে সমাধান করা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে থ্রাস্টারের ব্যর্থতা স্যাটেলাইটটির পুরো কার্যক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে। ISRO তাদের আপডেটে বলেছে, স্যাটেলাইটের সিস্টেমগুলি সুস্থ রয়েছে এবং স্যাটেলাইটটি বর্তমানে এলিপটিকাল কক্ষপথে চলছে, যা তার নেভিগেশন সুবিধা পুরোপুরি কার্যকর করার জন্য উপযুক্ত নয়।

থ্রাস্টার ব্যর্থতা: পরিণতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ISRO আরও জানিয়েছে যে তারা এখন বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, যাতে এলিপটিকাল কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটটি কোনওভাবে নেভিগেশন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যাটেলাইটটি বর্তমানে কক্ষপথে থাকা অবস্থায়, সেখান থেকে সম্ভাব্য ভাবে তার কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ করার উপায়গুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু, এটি প্রাথমিকভাবে উল্লেখযোগ্য যে, স্যাটেলাইটটি নিজস্ব উদ্দেশ্যে, বিশেষত ভারতের মহাকাশ ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি কার্যকর হবে না যদি না এটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থানান্তরিত হয়।

তবে স্যাটেলাইটের প্যানেলগুলি সফলভাবে খোলা হয়েছে এবং শক্তি উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। এছাড়াও, স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তা পরিচালিত হচ্ছে। তবে, ভবিষ্যতে স্যাটেলাইটটি তার পূর্ণ কার্যক্ষমতা পেতে কক্ষপথ পরিবর্তন করতে হলে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

ISRO এর ১০০তম উৎক্ষেপণ: একটি বড় অর্জন
এত বড় বিপর্যয়ের পরেও, GSLV-Mk 2 রকেটের উৎক্ষেপণ ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, কারণ এটি ছিল ISRO’র ১০০তম উৎক্ষেপণ। ISRO’র ১০০তম উৎক্ষেপণ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রের একটি বড় মাইলফলক। ১০০টি রকেট উৎক্ষেপণ প্রমাণ করে যে, ISRO বিশ্বব্যাপী মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে ভারত আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, NVS-02 স্যাটেলাইটের ব্যর্থতার কারণে কিছুটা হলেও এই সফল উৎক্ষেপণ ছাপিয়ে গিয়েছে। ISRO এখন বিকল্প উপায়ে কাজ করছে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এলিপটিকাল কক্ষপথে স্যাটেলাইট: ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এখন ISRO স্যাটেলাইটটির থেকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছে। স্যাটেলাইটের সিস্টেমগুলি এখনও সুস্থ থাকায়, ISRO একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, যা এলিপটিকাল কক্ষপথে থাকা অবস্থায় স্যাটেলাইটটির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে, এটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নয়, এবং স্যাটেলাইটটি ভবিষ্যতে যদি সফলভাবে কক্ষপথ পরিবর্তন করতে পারে, তবে তার কার্যক্ষমতা আরও ভাল হবে।

ISRO’র NVS-02 স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এই বিপর্যয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, সংস্থাটি এখনও তার প্রচেষ্টায় অবিচল রয়েছে। স্যাটেলাইটের কার্যক্ষমতা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এটি আবারও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। ISRO তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে মহাকাশের বিশালতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে।